এবার নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন বাতিল হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সরকারি আদেশ (গেজেট) হাতে পাওয়ার পর দলটির নিবন্ধন বাতিলসংক্রান্ত করণীয় ঠিক করবে ইসি।
এক্ষেত্রে আজ গেজেট প্রকাশ হলে আইন-বিধি পর্যালোচনা করে আজই নিবন্ধনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর নৌকা প্রতীকে ইসির নিবন্ধন পায় আওয়ামী লীগ। দলটির নিবন্ধন নম্বর ৬। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যায়। আরপিও-এর ৯০ (জ) অনুচ্ছেদের (১) (খ) দফায় বলা হয়েছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে- যদি সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের গেজেট প্রকাশের পরই নিবন্ধন নিয়ে ইসি সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, যদি সোমবার গেজেট প্রকাশ হয় তাহলে সোমবারই আওয়ামী লীগের নিবন্ধন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তিনি বলেন, আমরা তো দেশের বাইরের না। আমরা দেশের নাগরিক। দেশের স্পিরিট বুঝি আমরা। গতকাল নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সরকার থেকে যে আদেশ জারি হবে, সে আদেশের শর্তানুযায়ী প্রচলিত আইন অনুসরণ করে ইসির যা করণীয় তাই করবে। ওটা আমাদের হাতে এলে, এর ওপর ভিত্তি করে কমিশনের যা করণীয় করা হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের দাবির মুখে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ দলটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে (আজ সোমবার) জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা। সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। এর আগে ২৩ অক্টোবর ‘সন্ত্রাসী’ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই আইনের আওতায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার। বিলুপ্ত বা বাতিল হলে দলের নামসহ সরকারি গেজেটে প্রকাশ করতে হবে ইসিকে। অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সিদ্ধান্তটা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানছি, আপনারা যেভাবে দেখছেন, আমরাও সেভাবে দেখছি। এ-সংক্রান্ত পেপার্স আসবে নিশ্চয়ই, তারপর আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে। আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সরকার যে আদেশটা দেবে, আদেশে কী শর্ত থাকবে নির্বাচন কমিশন এখনো জানে না। আদেশের ওপর ভিত্তি করে ইসি প্রচলিত আইন অনুযায়ী যা করার তাই করবে।