চলতি বছরে গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) সারা দেশে রাজনৈতিক সংঘাতে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মার্চেই মারা গেছেন ৪১ জন। ১৩ জন করে মারা গেছেন জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে। এ ছাড়া সহিংসতায় ১ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন। গত বুধবার মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকারকর্মীদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়।
প্রতিবেদনে গত তিন মাসে নানা ধরনের সহিংসতায় সব মিলে ১৩৩ জন মারা গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া নিম্ন আদালত থেকে ২৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে আটটি। এর মধ্যে পিটিয়ে মারা হয় তিনজনকে, নির্যাতনে মারা যান দুজন আর গুলিতে নিহত হন তিনজন। কারাগারে মারা যান ১৯ জন। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ছয় বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া চোর-ডাকাতসহ বিভিন্ন সন্দেহে ৩৩ জন গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারি-মার্চ মাস পর্যন্ত ৬৪ বার সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আহত হয়েছেন ৪৭ জন, লাঞ্ছিত হয়েছেন ১০ জন, আক্রমণ ও গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন করে। এ ছাড়া হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন পাঁচজন।
অধিকারের দেওয়া ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে- গত তিন মাসে ২৫৭ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু আছে ৫৩ জন আর প্রাপ্তবয়স্ক আছেন ৫৩ জন। বয়স জানা যায়নি ৫৩ জন নারীর। এ ছাড়া ১৪ জন নারী যৌতুকের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছেন বলে জানানো হয়েছেন। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১২ জন নারী।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের দেওয়া প্রতিবেদনে একগুচ্ছ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করা, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩ বাস্তবায়ন করাসহ নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ সনদের অপশনাল প্রটোকল অনুমোদন করা, গুমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ ভুক্তভোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া, কারা কর্মকর্তাদের অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে আইনিব্যবস্থা নেওয়া, সর্বস্তরে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ ও সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩সহ সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুততার সঙ্গে অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেওয়া এবং সীমান্তে বিএসএফের সব ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করাসহ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তসংক্রান্ত চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক মেনে চলা।