আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে নানান চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি), রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা। এপ্রিলের প্রথমার্ধে ভোট গ্রহণ করতে হলে ৪৫ থেকে ৫০ দিন আগে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে তফসিল ঘোষণা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। স্থানীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০ ফেব্রুয়ারি রমজান মাস শুরু হওয়ার সম্ভাবনা। ঈদুল ফিতর হতে পারে ২০ মার্চ। এ ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ দিন আগে রমজানের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে ইসিকে। একইভাবে রমজানের মধ্যেই মনোনয়নপত্র দাখিল ও প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দসহ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে রমজানের মধ্যে তফসিল দেওয়া থেকে নির্বাচনি অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা ইসি, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে। আর তফসিল ঘোষণার পরপরই দেশব্যাপী নির্বাচনি আমেজ শুরু হয়। চলতে থাকে মিছিল-সমাবেশ। রমজানের মধ্যে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা ও আমেজে ভাটা পড়তে পারে। এ ছাড়া এপ্রিলে এসএসসি পরীক্ষাও হাতে পারে। আর পরীক্ষার আগে দেশব্যাপী নির্বাচনি আমেজে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়েও সংকট দেখা দিতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা এবং সেই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো সংকট আছে কি না-জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী সপ্তাহে নির্বাচন নিয়ে কমিশনের বৈঠক হতে পারে। তবে সংকট নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছর এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে। অনেকেই এ সময়সীমাকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবেও দেখছেন।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রোজা ও ঈদের পরপরই নির্বাচন হলে প্রার্থীরা প্রচারণায় বিপাকে পড়বেন। ইফতার পার্টির মাধ্যমে প্রচারণা চালাতে গিয়ে ব্যয় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এ ছাড়া সে সময় প্রচ গরম এবং ঝড়বৃষ্টির প্রকোপ থাকবে, যা নির্বাচনি জনসভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত করবে।’ এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনই ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে, ব্যতিক্রম মাত্র দুবার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, জনগণের মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। বাস্তবে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ সম্পর্কে জনদাবি উপেক্ষিতই হয়েছে। ডিসেম্বরে কেন জাতীয় নির্বাচন করা যাবে না তাঁর ভাষণে এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। এ ছাড়া নির্বাচন কেন আগামী বছরের এপ্রিলে নিতে হবে তারও গ্রহণযোগ্য কোনো বক্তব্য নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা যে নির্বাচন উৎসবের আনন্দে নজিরবিহীন করতে চান তার জন্য জাতীয় নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বর বা তার আশপাশে অনুষ্ঠিত হওয়াটাই উত্তম।’ ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৫৩ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয়। প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৬০ দিন সময় দিয়ে তফসিল হয়েছিল। ৫৪ দিন সময় দিয়ে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হয়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন সময় দিয়ে তফসিল হয়। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৬৯ দিন সময় রেখে তফসিল হয়েছিল। নব্বইয়ের গণ আন্দোলনের পর পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৭৮ দিন সময় দিয়ে তফসিল হয়েছিল। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে তফসিল দিয়ে তিনবার পরিবর্তন করতে হয়। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন সময় দেওয়া হয়। সবচেয়ে কম ৪২ দিন সময় দিয়ে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। নবম সংসদ নির্বাচনেও ৪৭ দিন সময় নিয়ে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৬ দিন সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা করার পর এক সপ্তাহ পিছিয়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয় ভোটের তারিখ।