টানা কারফিউ, ইন্টারনেট শাটডাউন, পুলিশের গণগ্রেপ্তার আর চিরুনি অভিযানে আন্দোলন পরিস্থিতি যখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে তখন আবারও মাঠে নামার পরিকল্পনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গত বছর এই ২৫ জুলাই সারা দেশের ছাত্রসমাজের উদ্দেশে নতুন আটটি বার্তা দেয় তারা।
বার্তাগুলো ছিল- শহীদ আবু সাঈদসহ নিহতদের স্মরণ, আত্মার মাগফিরাত কামনা ও তাদের প্রতিবাদী স্পিরিটকে ধারণ করা। নিহতদের কবর জিয়ারত ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন। যেসব লাশের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়নি, তাদের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তরের জন্য সহায়তা করা ও জানাজায় অংশগ্রহণ করা। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের যথাসম্ভব সহযোগিতা করা। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও এলাকায় নিহত ও আহতদের তালিকা তৈরি ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা। হত্যা ও হামলায় সরাসরি জড়িতদের চিহ্নিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খোলার জন্য প্রশাসনকে চাপ দেওয়া ও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা। ফেসবুকে ক্ষোভ না ঝেড়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি গ্রহণ ও বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করা। এ ছাড়া বিদেশে অবস্থানরতদের প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে এই ক্র্যাকডাউন ও হত্যা-নিপীড়ন প্রচার ও বাংলাদেশের আন্দোলনরত ছাত্র-নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান তারা। সেই সঙ্গে দ্রুত ইমার্জেন্সি হেলথ ফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন তারা। এদিকে আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশন পরিদর্শনে যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অগণিত মৃত্যুর ভিড় এড়িয়ে নাকে টিস্যু চেপে ধরে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেলের জন্য তার কান্নার দৃশ্য জনমনে ক্ষোভের জন্ম দেয়। একই দিন তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন আরও উসকে দেওয়ার অভিযোগে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে সাধারণ নেতা-কর্মীরা ভুয়া ভুয়া স্লোগান তোলেন। কার্যালয়জুড়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
২৫ জুলাইয়েও জারি ছিল পুলিশের গণগ্রেপ্তার। ওইদিন সারা দেশে নতুন করে আরও ৬২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে। এ নিয়ে পাঁচ দিনে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেপ্তার হয় পাঁচ হাজার মানুষ। যাদের বেশির ভাগই ছিলেন বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মী।