ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তেজনা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সময় অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বহু কাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচন। ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে প্রার্থীরা প্রতিদিনই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানান কর্মসূচি পালন করছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত, চায়ের আড্ডা থেকে পড়ার টেবিল- আলোচনায় কেবলই ডাকসু নির্বাচন।
শিক্ষার্থীরা যেন উন্মুখ হয়ে হয়ে আছেন ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানান আইনি জটিলতা মাড়িয়ে বহুল কাঙ্ক্ষিত ডাকসু নির্বাচন নির্ধারিত সময়ে হবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা সংশয়ও আছে। গত সোমবার হাই কোর্ট আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দিয়েছিলেন। পরে এক ঘণ্টার মধ্যে চেম্বার জজ আদালত হাই কোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। তবে সংশয় যে পুরোপুরি কেটে গেছে তা বলার উপায় নেই।
ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান গতকাল ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একজন প্রার্থীর বৈধতা-অবৈধতা নিয়ে রিট হয়েছে। আদেশ হলে ওই প্রার্থী নিয়ে হবে। কিন্তু পুরো নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া পরিকল্পিত মনে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীলের অপচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আবিদ বলেন, ডাকসু নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।’
ইসলামী ছাত্রশিবির প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নানান ষড়যন্ত্র চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি পক্ষকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। গতকালও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দিনভর ভোটার ও ভোট প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল ক্যাম্পাস। প্রার্থীদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের ঘটনাও ঘটছে। ঢাবি শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে যে নারী শিক্ষার্থী হাই কোর্টে রিট করেছিলেন, তাকে গণধর্ষণের হুমকি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আরেক শিক্ষার্থী। এমন ঘটনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া শিক্ষার্থী শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি বিচার দাবি করেছেন তারা। অপরদিকে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, নারী হেনস্থার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে পোস্টকারী শিক্ষার্থী ‘ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত’।
ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ : ছাত্রদলের অপপ্রচারের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। গতকাল দুপুরে বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে শুরু হয়ে শাহবাগে গিয়ে শেষ হয়।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে হাই কোর্টের স্থগিতাদেশের ওপর শুনানি আজ : ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত থাকবে বলে আদেশ বলা হয়েছে। ঢাবির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এ আদেশ দেন। এর আগে গত সোমবার এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট ডাকসু নির্বাচন ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন। সেদিনই এ বিষয়ে হাতে লেখা আবেদন নিয়ে চেম্বার জজের দ্বারস্থ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী। পরে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাবির সিভিল মিসলিনিয়াস পিটিশন (সিএমপি) দাখিল করা পর্যন্ত হাই কোর্টের আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার আদালত। এর ধারাবাহিকতায় গতকাল সিএমপি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ, যা চেম্বার আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালত আপিল বিভাগের নিয়মতি বেঞ্চে শুনানির জন্য বুধবার (আজ) দিন নির্ধারণ করেছেন। এ সময় পর্যন্ত হাই কোর্টের আদেশের ওপর চেম্বার জজ আদালতের দেওয়া স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়েছে।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট মনোনীত ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বামজোট মনোনীত প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী বি এম ফাহমিদা আলম রিটটি দায়ের করেন। এতে অভিযোগ করা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে এস এম ফরহাদ ‘ছাত্রলীগের কমিটিতে’ ছিলেন। এরপরও তিনি কীভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেলে প্রার্থী হলেন- এ প্রশ্ন তুলে রিটে তার প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।