ব্যবসায়ীরা এখন ‘কার্যত এতিম’-এর মতো অবস্থায় রয়েছেন। এফবিসিসিআই (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ায় তাদের পক্ষে কেউ কথা বলছেন না। বাংলাদেশ বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনৈতিক উত্তেজনা, উচ্চ সুদের চাপ এবং বাণিজ্যযুদ্ধের ধাক্কায় সংকটময় সময় পার করছে। জাতীয় নির্বাচন দ্রুত হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে।
গতকাল রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় ও এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (বিবিএফ)। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক খোরশেদ আলী মোল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) প্রেসিডেন্ট কামরান তানভীরুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, আবুল কাসেম হায়দার, শফিউল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আবদুল হক। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের নতুন সংগঠন বিবিএফ থেকে আগামী এফবিসিসিআই নির্বাচনের জন্য আবদুল হককে মনোনীত করেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটছে। বাংলাদেশকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে যোগ্যতার সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ নির্ধারণ করে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে। রপ্তানি পোশাক ও রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হলেও নতুন প্রবৃদ্ধির চালক খুঁজে বের করতে হবে। ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি, আইটি সার্ভিসেস ও লেদারসহ উদীয়মান খাতগুলোতে নজর দেওয়া জরুরি। তিনি বলেন, দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হারও বেড়ে গেছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বেসরকারি খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনা, বিশেষ করে এসএমই সেক্টরে গুরুত্ব দেওয়া অপরিহার্য।
আবদুল মজিদ বলেন, নীতি প্রণয়নে বেসরকারি খাতকে সব সময় সম্পৃক্ত করা জরুরি। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের আগে সরকারকে বেসরকারি খাতের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে প্রাইভেট সেক্টরনির্ভর অর্থনীতিতে ধাক্কা প্রথমে এ খাতেই আসে। মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ একক কোনো ঘটনা নয়। বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির বড় রূপান্তরের অংশ। চীনা বাজার থেকে শিল্প সরছে। বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রতিযোগিতায় এগোতে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে, পরিবহন অবকাঠামো উন্নত করতে হবে এবং সুশাসন জোরদার করতে হবে। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এফবিসিসিআইকে যোগ্য নেতৃত্বে পরিচালনা করতে হবে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখা জরুরি। কাস্টমস ও ব্যাংকিং খাতে ব্যবসায়ীদের অযথা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনই এখন ব্যবসায়ীদের প্রধান দায়িত্ব।