ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনার আলোকে সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। সেনাবাহিনী নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের অপপ্রচার -অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ডাকসু নির্বাচন কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে সেনাবাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেবে কিনা এবং ভোট যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কি ভূমিকা রাখবে, প্রশ্ন করা হলে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকসু নির্বাচনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এর আগেও আমরা আইএসপিআরের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বলেছি। তবুও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল প্রোপাগান্ডা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই প্রোপাগান্ডা করে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। এ নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছেন আমরা সবার মঙ্গল কামনা করি। এ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সুস্থ পরিবেশে গণতন্ত্র চর্চা হোক এবং নির্বাচনের চর্চা হোক- আমরা এটাই চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন থেকে আমরা অচিরেই নির্বাচনের নির্দেশনা পাব। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মাঠে কাজ করব। আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি রয়েছে। সেনাবাহিনীকে নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত অনেক সেনাকর্মকর্তা প্রচারণা চালাচ্ছেন, এ বিষয়টি সেনাবাহিনী কীভাবে দেখছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি অপ্রত্যাশিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত। আপনারা বুঝতে পেরেছেন কে কী উদ্দেশ্যে এসব প্রোপাগান্ডা ও মিস-ইনফরমেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিচ্ছে। আপনারা ভালো বোঝেন, আপনাদের দায়িত্ব দিলাম কে কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। মুক্তিযোদ্ধার বাসায় মব সৃষ্টি করে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের আগেও যেভাবে সশ্রদ্ধ সম্মান করেছি, আজও করি এবং ভবিষ্যতেও অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করব। কোনো মব করে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার কোনো সুযোগ নেই। মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমানের বাড়ির সামনে একটি মব সৃষ্টি হয়েছিল, যখন সেনাবাহিনী মেসেজ পেয়েছে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউনিট উপস্থিত হয়ে মব নিয়ন্ত্রণ করেছে। রাজবাড়ীতে নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার লাশ কবর থেকে তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও দরবারে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, রাজবাড়ীর ঘটনাটি অনেক পরে সেনাবাহিনী জানতে পারে। যখনই জানতে পেরেছে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ ও সেনাবাহিনী তৎপর। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মবের বিষয়ে করা অপর এক প্রশ্নে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। প্রায় ৮০ শতাংশ হারানো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে। অস্ত্র উদ্ধার হলে গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সহযোগিতা করবে।
মবের বিষয়ে বলেন, মবের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স- এটা বলেছি আমরা। যেখানে যখন মব হয়েছে সেখানে সেনাবাহিনী দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। কয়েকটি জায়গায় আমাদের যেতে যে বিলম্ব হয়েছে, সেটা সোর্স থেকে তথ্য পেতে বিলম্ব হওয়ার কারণে। যে কোনো ঘটনা ঘটার পর সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন হয়। আমাদের অনুরোধ জানাতেই কিছুটা কালক্ষেপণ হয়ে যায়, তারপর আমাদের নিকটস্থ ক্যাম্প থেকে যদি প্যাট্রল পাঠায় তখনো কিছু সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে আসলে যদি কোনো ঘটনা ঘটে যায়- এটার দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিতে পারে না। এমন একটি উদাহরণ দেখানো যাবে না যে আমাদের অনুরোধ করেছে আমরা সেখানে যাইনি বা সেনাবাহিনীর সামনে মব হয়েছে। সেনাবাহিনী যায়নি এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, আমরা চেষ্টা করছি সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা ইনশা আল্লাহ আরও কমে আসবে। মব সন্ত্রাসের নানা ঘটনা তুলে ধরে সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম বলেন, গত এক বছর ধরে ধৈর্য এবং পরিশ্রমের সঙ্গে সরকার ও জনগণের জন্য আমরা কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করা বা রক্ষা করা শুধু সেনাবাহিনীর কাজ নয়। ম্যাজেস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, আমরা গ্রেপ্তার, আটক ও হস্তান্তর করতে পারি। কোনো সাজা দিতে পারি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব অংশীদারকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এরই মধ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করা শুরু হয়েছে। একত্রে কাজ করলে সামনের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আশা করি। গুম কমিশন নিয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান কী এবং গুম কমিশনকে সেনাবাহিনী কীভাবে সহযোগিতা করছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গুম কমিশন নিয়ে সেটা আসলে গুজব। কেননা গুম কমিশনের তদন্তের জন্য আমাদের মধ্যে যাদের ডাকা হয়েছে সবাই গুম কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছে এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। এখনো সহযোগিতা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও প্রয়োজন হলে সহযোগিতা করে যাবে। সীমান্তে আরাকান আর্মির উৎপাত ও চোরাচালানের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সীমান্তে যে সংস্থাগুলো কাজ করে তারা এ বিষয়গুলো দেখছে। তারা এ বিষয়ে সজাগ ও সোচ্চার আছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এ বিষয়ে পরিস্থিতি অবনতি হলে সবাই সম্মিলিতভাবে ট্যাকেল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো দলের যদি মিছিলের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষতিয়ে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কর্নেল শফিকুল ইসলাম জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসায় সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৫৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। ঢাকায় এখনো ৩৫ জন চিকিৎসাধীন।