জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১১ সেপ্টেম্বর। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথক মোট সাতটি প্যানেল ঘোষণা করেছে। গোটা ক্যাম্পাস চষে বেড়াচ্ছেন এসব প্যানেলের ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাঁরা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ইশতেহার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিভাগ, আবাসিক হল, টিএসসি, ক্যাফেটেরিয়া, বটতলা সব জায়গায় আলোচনার মূল বিষয় এখন জাকসু নির্বাচন। এদিকে নির্বাচনে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ থেকে ভিপি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে অনুমতির নির্দেশনা চেয়ে গতকাল হাই কোর্টে রিট করেছেন ভিকটিম অমর্ত্য রায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় তাঁদের অধিকার আদায়ের যথাযথ কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না। জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের সার্বিক অধিকার আদায়ে কাজ করবেন বলে আশা তাঁদের। জাবি শাখা ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী শেখ সাদি বলেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য, গবেষণা, পড়াশোনার সুবিধা নিশ্চিত করতে আমি কাজ করব। গণরুম, গেস্টরুম কালচারের মতো শিক্ষার্থীদের জন্য পীড়াদায়ক বিষয়গুলো কখনো যেন ফিরতে না পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
তাঁকে কেন শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব কোনো কাজ করার সুযোগ পাইনি। কিন্তু খুনি হাসিনার পতন-পরবর্তী সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করেছি। এর মধ্যে অন্যতম হলো আমরা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীদের ফ্রি হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের আওতায় এনেছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে চাই। নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে ভোটাররা আমাকে সে সুযোগ করে দেবে আশা রাখি।’
তবে এ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে একধরনের শঙ্কাও বিরাজ করছে। কারণ হিসেবে ভোটাররা বলছেন, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আট দিন পর ৬ সেপ্টেম্বর ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে জাকসুর নির্বাচন কমিশন। এ ঘটনাকে ভোটার ও প্রার্থীরা নির্বাচন বন্ধের পাঁয়তারা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘জাকসু নির্বাচন ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে এবং ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা সব অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করছি।’
জাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে রিট : নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, জাকসু নির্বাচনে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ থেকে ভিপি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে অনুমতির নির্দেশনা চেয়ে রিট করেছেন প্রার্থিতা বাতিল হওয়া অমর্ত্য রায়। গতকাল হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়েছে। তাঁর আইনজীবী মানজুর আল মতিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশা করছি, মঙ্গলবার হাই কোর্টে রিটের ওপর শুনানি হবে।’ উল্লেখ্য জাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী অমর্ত্য জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা মোতাবেক ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত। তাই ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহার করা হলো।