ভারত ও মালয়েশিয়াসহ পাঁচটি দেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় তার সম্পদ অর্জনের রেকর্ডপত্র জব্দ করেছে দুদকের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স। এর আগে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে সাইফুজ্জামানের ৫৮২টি বাড়ি ও ফ্ল্যাট থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। গতকাল দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। দুদক সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ সেপ্টেম্বর আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশে থাকা সম্পদের ডকুমেন্টগুলো গোপনে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ইউসিবিএলের চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের ড্রাইভার ইলিয়াস তালুকদার প্রথমে সেগুলো নিজের বাড়িতে রাখলেও পরে ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান শুরুর আগে পাশের ওসমান তালুকদারের বাড়িতে সরিয়ে রাখেন। এসব নথি জব্দের পর পর্যালোচনায় দেখা গেছে- ইতিপূর্বে পাওয়া চারটি দেশের (যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুর) ৫৮২টি সম্পদ ছাড়াও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় সম্পদ অর্জনের তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে কেনা বাড়ির মালিকানা, ভাড়ার আয়, মেইনটেনেন্স ব্যয়সহ বিভিন্ন তথ্য ও ডকুমেন্টস এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দ্বারা বিদেশে মুদ্রা পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণও এই ডকুমেন্টে রয়েছে। অনুসন্ধান টাস্কফোর্স ধাপে ধাপে এসব নথি যাচাই করে সুনির্দিষ্ট তথ্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে।
২৩ বস্তা নথি জব্দ : সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিদেশে অর্জিত সম্পদের ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাইফুজ্জামানের অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আবদুল আজিজের দেওয়া তথ্যে এসব জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া বস্তাগুলোতে বিদেশে সম্পদ অর্জনের নথি, বিল পরিশোধের তথ্য ও ভাড়া আদায়ের আলামত আছে বলে জানিয়েছে দুদক। রবিবার ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়ি থেকে এসব আলামত জব্দ করা হয়।
পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান জানান, সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চলছে। রিমান্ডে পাওয়া তথ্যে জানা যায় যে- অনেক ডকুমেন্টস গায়েব করা হয়েছে, যেগুলো রুকমিলা জামানের ড্রাইভার ইলিয়াসের বাসায় রাখা হয়েছিল। পরে শুক্রবার সেখানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু দুদকের অভিযানের তথ্য পেয়ে বস্তাগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। ওই দিন বাসার সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়- দুদক কর্মকর্তারা যাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে ওই আলামতগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। পরে তারা একটি ছোট বাসা থেকে ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেন। কয়েকটি বস্তা খুলে দেখা গেছে- বিদেশে সম্পদ অর্জনের ক্রয় সংক্রান্ত পেমেন্ট, বাড়ি ভাড়া আদায়ের তথ্য, বিভিন্ন বিল পরিশোধ, কোর্টের আদেশসংক্রান্ত ডকুমেন্টস রয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে দুদকের একটি টিম অভিযান চালিয়ে জাবেদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা একটি মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠায়।