শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

দীঘল চুলের রহস্য

রেশম কোমল একগোছা লম্বা চুল কার না পছন্দ। কিন্তু আপনি চাইলেই তো আর চুল লম্বা হয়ে যাবে না? সঠিক পরিচর্যা বজায় রাখলে চুল দ্রুত লম্বা হওয়া সম্ভব।

দীঘল চুলের রহস্য

মডেল : শান্তা জাহান

আজকাল অনেকেরই অভিযোগ দ্রুত চুল লম্বা হয় না। তাছাড়া নানা হেয়ার কাটের ভিড়ে লম্বা চুল তেমন দেখাও যায় না। কিন্তু কেউ কেউ তো চান তার মাথায় লম্বা একগোছা রেশম কোমল চুল থাকুক। আধুনিক জীবনযাত্রায় এত দূষণ, স্ট্রেস আর পুষ্টিযুক্ত নিরাপদ খাবারের অভাবে এটাও মনে হয় স্বাভাবিক। তবে এতকিছুর ভিড়েও আপনি পছন্দসই চুল পেতে পারেন। সে জন্য প্রথম যে জিনিসটি নিশ্চিত করতে হবে তা হলো সঠিকভাবে ঘুমাতে হবে। নিরাপদ বিষমুক্ত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে, নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখতে হবে। এরই সঙ্গে কিছু বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হবে যা আপনার চুলকে দ্রুত লম্বা করে তোলে। এবার তবে জেনে নেওয়া যাক দ্রুত চুল লম্বা করার কিছু কৌশল।

 

অয়েল ম্যাসাজ

চুল লম্বা করার জন্য তেল দেওয়ার প্রচলন চলছে প্রাচীনকাল থেকে। তবে মূল বিষয় হলো, চুল লম্বা করতে তেল যতটা না উপকারী তার থেকে বেশি উপকারী তেল দিয়ে ম্যাসাজ করাটা। তেল দেওয়ার সময় চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করলে এতে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। ফলে চুলের ফলিকলগুলো উদ্দীপিত হয়। চুল পড়া বন্ধ হয় অনেকাংশে। এছাড়াও চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। তাই সম্ভব হলে সপ্তাহে কমপক্ষে দুদিন তেল দিয়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন। বাড়তি সুবিধা হিসেবে তেলের কারণে চুলে ডিপ কন্ডিশনিংয়ের কাজটাও হয়ে যাবে। চুলে তেল দিতে না চাইলে কেবল আঙ্গুল দিয়েও মাথার ত্বক ম্যাসাজ করতে পারেন। এছাড়াও চুলে শ্যাম্পু করার সময়ই ম্যাসাজের কাজ সেরে নিতে পারেন।

 

উপকারী ক্যাস্টর অয়েল

চুল ঘন ও লম্বা করতে সবচেয়ে উপকারী হলো ক্যাস্টর অয়েল। এই তেলে রয়েছে ভিটামিন ‘ই’ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। তাই চুল দ্রুত বড় করতে দারুণ ভূমিকা রাখে এই তেল। সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল ও নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল অথবা বাদাম তেল কিংবা এই ধরনের সব তেল একসঙ্গে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান। তারপর ৩০-৩৫ মিনিট রেখে  শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এই কাজটি সপ্তাহে কমপক্ষে দুবার করলে তাৎক্ষণিক উপকার পাওয়া যায়। ব্যস্ততার কারণে দুবার সম্ভব না হলেও অন্তত একবার এই ম্যাসাজটি করতে পারেন। আপনার স্ট্রেস কমাতে চাইলে যোগ করতে পারেন কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল।

 

ডিমের প্যাক

চুল লম্বা করতে ডিমের কোনো জুড়ি নেই। ডিমে আছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন, আয়রন, ফসফরাস, জিংক, সেলেনিয়াম ও সালফার। মাঝারি দৈর্ঘ্যরে চুলের জন্য একটি বা দুটি ডিম নিন। এর সঙ্গে যোগ করুন এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কয়েক চামচ। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে লাগান। শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ফেলুন। মাথায় খুশকি থাকলে যোগ করতে হবে কয়েক চামচ লেবুর রস।

 

এগুলো তো গেল চুল লম্বা করার কৌশল। এবার জেনে নিন কীভাবে চুলের ঘনত্ব বাড়ানো যায়। এজন্য অবশ্য আপনাকে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হবে। এ সময় চুলের পরিচর্যায় ডিম ও অলিভ অয়েলের একটি প্যাক তৈরি করে নিতে হবে। ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা চুল ঝরা রোধ করে। এছাড়া আরও রয়েছে সালফার, জিংক, আয়রন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস এবং আয়োডিন। যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

 

কীভাবে তৈরি করবেন

একটি বাটিতে একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। এতে ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ও ১ চা চামচ মধু নিন। চুল লম্বা হলে পরিমাণ বাড়াতে হবে। তারপর উপকরণগুলো খুব ভালো করে মেশান। যখন এটি মসৃণ  পেস্টের আকার ধারণ করবে তখন ব্যবহার উপযোগী হবে। মসৃণ পেস্টের মতো হয়ে  গেলে মাথার ত্বকে আলতো ঘষে মিশ্রণটি লাগিয়ে ফেলুন। ২০ মিনিট পর প্রথমে ঠান্ডা পানি ও পরে শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার এটি ব্যবহার করার  চেষ্টা করুন।

 

সরিষার তেল ও মেহেদির প্যাক

সাধারণত চুলে সরিষার তেল একেবারেই ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু সরিষার তেল চুলের গোড়া মজবুত করে তুলতে বিশেষ কার্যকর একটি উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি চুল পড়া রোধ করে দেবে একেবারে। এর পাশাপাশি মেহেদি পাতা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। ফলে চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ।

 

কীভাবে তৈরি করবেন

একটি পাত্রে ২০০ গ্রাম সরিষার তেল নিন। এবার পাত্রটি চুলায় বসিয়ে দিন। তেল ফুটে উঠলে তাতে ১ কাপ পরিমাণ মেহেদি তাজা পাতা দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। যখন  দেখবেন মেহেদি পাতা পুড়ে কালো হয়ে  গেছে তখন তা চুলা থেকে নামিয়ে ছেঁকে ঠান্ডা করে নিন। একটি এয়ারটাইট বোতলে এই তেল সংরক্ষণ করুন। এই তেল সপ্তাহে ৩ দিন চুলে লাগান। সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন সারা রাত চুলে তেল লাগিয়ে  রেখে সকালে সাধারণভাবে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেললে। এভাবে প্রাকৃতিক উপায়েই আপনার চুল লম্বা করা সম্ভব। বাজারের নানা ব্র্যান্ডের প্রসাধন কিনে যেমন ঠকতে হবে না, তেমনি কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই পছন্দসই চুল পেয়ে যাবেন।

 

এছাড়া যেসব জায়গায় চুল বেশি পাতলা, পিয়াজ কেটে ঘষলে সেই অঞ্চলের ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ে। ফলে তা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আপনার হেয়ার ফলিকলের কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত থাকলে নিয়মিত ব্যবহারে তা সারিয়ে তোলে। যাদের চুল পাতলা তারা সপ্তাহে ২-৩ দিন ১০-১২ মিনিটের জন্য মাথার তালুতে পিয়াজ ঘষে ব্যবহার করলে কিছুদিনের মধ্যেই ফল পাবেন। আরেকটু ভালো ফলাফল পেতে চাইলে অ্যালোভেরার জেল বের করে নিন, ৪ চামচ মধুর সঙ্গে মিক্স করে সরাসরি চুলে এবং মাথার তালুতে লাগিয়ে ফেলুন। চাইলে এর সঙ্গে কোনো ট্রিটমেন্ট ক্রিমও যোগ করতে পারেন। চুল ঘন করার সঙ্গে সঙ্গে এটি আপনার চুলের আগা ফেটে যাওয়া  রোধ করবে।

 

লেখা : ফ্রাইডে ডেস্ক

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর