আমাদের দেশে শীতের পরে চিকেনপক্সে প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়। অন্য সময়ে দেখা দিলেও আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ, ভেরিসেলা জোস্টার নামের ভাইরাসের জন্য দায়ী। ছোটবড়, নারী-পুরুষ ভেদে সকল বয়েসিরাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে শিশুদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেশি হয়ে থাকে। একবার আক্রান্ত হলে সাধারণত শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। অনেক সময় পরবর্তীবার এ রোগের আক্রমণে 'হারপিজ জোসটার' নামে আরেক রোগের প্রকাশ ঘটে থাকে।
কিভাবে ছড়ায় : কাশি-হাঁচি, এমনকি ত্বকের সংস্পর্শে এলেও অন্যরা এতে আক্রান্ত হতে পারে। রোগটি ছড়াতে শুরু করে ত্বকে গুটি দেখা দেওয়ার দুদিন আগে থেকেই। আর ছড়াতে থাকে যদ্দিন না সব কটি গুটি শুকিয়ে যায়। তাই আক্রান্ত রোগী অনেক সময় নিজে বুঝে ওঠার আগেই রোগ ছড়াতে থাকে।
লক্ষণ : আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার ১০-২১ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। ত্বকে ফুস্কুড়ি প্রকাশ পাওয়ার ২-৩ দিন আগেই জ্বরের ভাব হয়, শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। পেটে ব্যথা হতে পারে। ফুস্কুরিতে চুলকানি ও জ্বালা-পোড়া অনুভূতি হতে পারে। ফুস্কুরিতে পরবর্তীতে পানি আসে এবং সবশেষে শুকনো কাল বর্ণের খোসা তৈরি হয়ে থাকে। এর স্থায়িত্ব ১৫-৩০ দিন হতে পারে।
চিকিৎসা : ভাইরাসজনিত রোগ বিধায় এ রোগের কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন করলে কদিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে লক্ষণ অনুসারে চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। যেমন জ্বর ও চুলকানির তীব্রতা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে, অনেক সময় এনটি-ভাইরাল বা এন্টিবায়ওঁটিক ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।
জটিলতা : আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় শ্বাসনালীর সংক্রামণ, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি দেখা দিয়ে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামণ হতে পারে। সংক্রামন পরবর্তীতে ত্বকে গর্ত থেকে যেতে পারে।
ডা. এম আর করিম রেজা
সি. কনসালটেন্ট, চর্ম ও মেদজনিত রোগ, রিভাইভ মেডিক্যাল এন্ড লেজার সেন্টার, ঢাকা।