জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এখন অনেকটাই জনমানবশূন্য। গত বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষের পর থেকে চিকিৎসক, নার্স ও সহায়ককর্মীরা কাজে ফেরেননি। এর ফলে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অস্ত্রোপচার ও জরুরি সেবা। আজ শুক্রবারও হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা চালু হয়নি, ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা মূল ফটক থেকেই ফিরে যাচ্ছেন।
আজ সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ও নার্স নেই। নতুন রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন, এমনকি পূর্বে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীরাও ফলোআপের জন্য এসে কোনো সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে, যেখানে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা বারবার ঘটেছে। এতে চিকিৎসক ও স্টাফরা মারাত্মক আতঙ্কে রয়েছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন। এছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, আটজন ছাড়া বাকি জুলাই যোদ্ধারা সুস্থ। তাদের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। ছুটি দেওয়া হলেও তারা হাসপাতাল ছাড়ছেন না। বর্তমানে আমি ছুটিতে রয়েছি। এত ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি এবং প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেবো। তিনি আরও জানান, চিকিৎসক ও স্টাফদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে কেউ কাজে ফিরবেন না।
হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৫ মে বিষপান করলে উত্তেজনার সূত্রপাত হয়। এরপর ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং চরম অবিশ্বাসের আবহ তৈরি হয়। গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয় যখন হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধা, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল