সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৃহৎ গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মূত্রাশয়ের সংক্রমণ কিছু মারাত্মক ক্যান্সারের প্রাথমিক সতর্কতা সংকেত হতে পারে। এসব সংক্রমণ সাধারণত ক্ষতিকারক এবং বহুল প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে পরিচিত। এ সংক্রমণ যদি ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘটে তাহলে ধরে নিতে হবে- বিপদের ঝুঁকি বেশি।
গবেষণা অনুসারে, প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মানুষের স্বাস্থ্য রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিস্টাইটিস (মূত্রাশয়ের প্রদাহ), যা একটি সাধারণ ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) ধরনের সমস্যা, তার পরবর্তী মাসগুলোতে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যদিও বেশিরভাগ ইউটিআই গুরুতর নয় এবং চিকিৎসায় দ্রুত সেরে যায়, এই গবেষণায় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে কিছু ক্ষেত্রে, সিস্টাইটিস ক্যান্সারের একটি ক্লিনিকাল মার্কার হতে পারে।
গবেষণায় জানা গেছে, সিস্টাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে সংক্রমণের তিন মাসের মধ্যে মূত্রাশয়, প্রোস্টেট এবং গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের মতো ইউরোজেনিটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩০ গুণ বেড়ে যায়। বিশেষভাবে, পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট বা মূত্রাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৪ গুণ বেড়ে যায়, আর মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ৩০ গুণ বেড়ে যায়, যেখানে মূত্রাশয় এবং এন্ডোমেট্রিয়াল (গর্ভ) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
"অতিরিক্ত সিস্টাইটিস ইউরোজেনিটাল ক্যান্সারের জন্য একটি ক্লিনিকাল মার্কার হতে পারে, বিশেষত যখন অন্য কোনও কারণ স্পষ্ট নয়," গবেষকরা BMJ হেলথ জার্নালে উল্লেখ করেছেন। গবেষকগণ আরও জানিয়েছেন, ক্যান্সার বা প্রাক-ক্যান্সারজনিত পরিবর্তনগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে বা মূত্রনালীর পরিবেশ পরিবর্তন করে, যার ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
তারা বলেছেন, সিস্টাইটিসের পরবর্তী সময়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি সাধারণভাবে সিস্টাইটিসবিহীন ব্যক্তিদের তুলনায় বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এজন্য বয়স্কদের জন্য বিশেষভাবে সতর্কতা অবলম্বন এবং ফলো-আপ চেক-আপের পরামর্শ দিয়েছেন, বিশেষত তাদের ক্ষেত্রে যারা সংক্রমণের স্পষ্ট কারণ জানেন না।
সিস্টাইটিস বা মূত্রাশয়ের প্রদাহ সাধারণত নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, এবং প্রায় অর্ধেক নারীই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে এই সমস্যায় ভোগেন। পুরুষদের মধ্যে এটি তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়, তবে প্রায় সাতজন পুরুষের মধ্যে একজন এ সমস্যার শিকার হন।
এ রোগের লক্ষণগুলোতে প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন বা জরুরিভাবে প্রস্রাব করার প্রবণতা, তলপেটে ব্যথা এবং কখনও কখনও প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে। যদিও বেশিরভাগ ইউটিআই ই. কোলাই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এবং সাধারণত ক্যান্সারের সাথে সম্পর্কিত নয়, এই গবেষণাটি বারবার বা ব্যাখ্যাতীত সংক্রমণের গুরুত্বকে তুলে ধরে, বিশেষভাবে বয়স্কদের মধ্যে।
যুক্তরাজ্যের এনএইচএস তথ্য বলছে, মহিলাদের মধ্যে ইউটিআই বেশি হয় কারণ তাদের মূত্রনালী ছোট, যার ফলে ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ে সহজেই প্রবেশ করতে পারে। অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে যৌনতা, গর্ভাবস্থা, মূত্রনালীর ক্যাথেটার, কিডনিতে পাথর, ডায়াবেটিস এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত—যার মধ্যে কেমোথেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা আছেন। প্রতিবছর, যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ মূত্রাশয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আর ১০ হাজার নারীর গর্ভাশয়ের ক্যান্সার এবং ৫৫ হাজার পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার নতুন কেস হিসেবে শনাক্ত হয়।
এই গবেষণাটি প্রমাণ করে- যেসব রোগী স্থায়ী বা পুনরাবৃত্ত ইউটিআই থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে গভীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন, বিশেষত যখন সংক্রমণের কোনো স্পষ্ট কারণ চিহ্নিত করা কঠিন। "স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সিস্টাইটিসে আক্রান্ত বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ইউরোজেনিটাল ক্যান্সারের জন্য অতিরিক্ত ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা করার কথা ভাবা উচিত, বিশেষত যখন লক্ষণসমূহ অস্বাভাবিক বা সাধারণ চিকিৎসায় সাড়া দেয় না," গবেষকরা বলেন।
যদি আপনার প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া, ঘোলা বা রক্তাক্ত প্রস্রাব, অথবা তলপেটে ব্যথা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বেশিরভাগ ইউটিআই অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে সফলভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে, যদিও কিছু ক্ষেত্রে আরও পরীক্ষা বা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
মেনোপজের পর যেসব নারীরা বারবার সংক্রমণের শিকার হন, তাদের জন্য ভ্যাজাইনাল ইস্ট্রোজেন ক্রিম ইউটিআই-এর ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও এই গবেষণার অর্থ এই নয় যে সব মূত্রাশয়ের সংক্রমণ ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা যে প্রাথমিক সনাক্তকরণ জীবন বাঁচাতে পারে—এমনকি সাধারণ লক্ষণগুলোও অবহেলা করা উচিত নয়।
সূত্র : দ্য সান।
বিডি-প্রতিদিন/জিসান/শআ