বৃহস্পতিবার, ২৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি

পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি

আমিনুল হক শামীম, সহসভাপতি, এফবিসিসিআই

বাংলাদেশের সৌন্দর্যে যুগে যুগে বহু পরিব্রাজক ও ভ্রমণকারী মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন সম্ভাবনা অপরিসীম। আমাদের রয়েছে সুবিশাল সমুদ্রসৈকত, পাহাড়, জলপ্রপাত, প্রত্নতত্ত্বের প্রাচুর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শনসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান, যা পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট। পর্যটন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন বিপুল সম্ভাবনাময় এ খাতে এখন প্রয়োজন মহাপরিকল্পনার। এসব নিয়েই বাংলাদেশ প্রতিদিনের ময়মনসিংহ প্রতিনিধি সৈয়দ নোমানের সঙ্গে কথা বলেছেন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম সিআইপি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কেমন?

আমিনুল হক শামীম : বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুলসংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজার ধরতে পারে তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে দেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশ বর্তমানে এই খাত থেকে প্রায় ৭৬.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক আয় করে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশে ১ হাজার ৬৮টি স্পট থাকলেও কয়েকটি স্পটেই কেন পর্যকটরা সীমাবদ্ধ?

আমিনুল হক শামীম : প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাইরে পর্যটন উপযোগী উল্লেখযোগ্য ও উপযোগী উপাদানের অভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। এই খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দের অপ্রতুলতা, সড়ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অপর্যাপ্ততা, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণে উপযুক্ত প্রচারণার অভাব, প্রান্তিক পর্যায়ে ট্যুরিজম সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান না থাকা, হয়রানিমূলক আচরণ সেই সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা, আন্তর্জাতিক ভাষাজ্ঞানসহ এ খাতের উপযোগী অন্যান্য ভাষাজ্ঞান সমৃদ্ধ জনবলের অপর্যাপ্ততা থাকার কারণে এ খাত এখনো অনেকটা পিছিয়ে। বিশাল সম্ভাবনাময় হলেও নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশি-বিদেশিরা বিমুখ।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : কেন পর্যটন খাতকে কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ?

আমিনুল হক শামীম : একটি উদাহারণ দিয়েই শুরু করি, পর্যটন খাতে ছাড়পত্র নিয়ে ২০১৯ সালে বান্দরবনের নীলাচলে ১৫ একর জায়গার ওপর বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করি। পরিকল্পনা ছিল আন্তর্জাতিক মানের একটি পাঁচতারকা হোটেল নির্মাণের। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে কোনো কাজই করতে পারিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দাউদুল ইসলামের অসহযোগিতাই ছিল এর কারণ।  এমন হয়রানির কারণে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা থেকে পিছিয়ে আসেন ক্ষুদ্র থেকে বড় উদ্যোক্তারাও।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বেসরকারি খাতে পর্যটন শিল্পকে ছেড়ে দিলে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

আমিনুল হক শামীম : বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সরকারি পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। অথচ বেসরকারি খাতে এ পর্যন্ত যত শিল্প ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সবই লাভের মুখ দেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, বেসরকারি খাতে এ শিল্পকে হস্তান্তর করলে আরও লাভজনক এবং পর্যটকদের আকর্ষিত করা যাবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশে ইকো-ট্যুরিজমকে বিকশিত করার জন্য কেমন পরিকল্পনা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন? 

আমিনুল হক শামীম :  ইকো-ট্যুরিজমের গুরুত্ব অনুধাবন করে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ইকো-ট্যুরিজমের বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশেও ইকো-ট্যুরিজমের সম্পদে ভরপুর। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শন। এসব ঘিরে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তুলতে পারলে অর্থনীতি হবে সমৃদ্ধ। এ ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোক্তাদের ইনটেনসিভও দিতে পারে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অনেক পিছিয়ে। এর কারণ কী?

আমিনুল হক শামীম : ২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বিদেশি পর্যটকরা এ দেশে ৩ হাজার কোটি টাকা টাকা খরচ করেছেন। অন্যদিকে দেশীয় পর্যটকরা খরচ করেন ৬৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

অথচ ভারত, থাইল্যান্ডসহ আশপাশের দেশগুলোতে  বৈশ্বিক অনেক পর্যটক আসেন। অথচ পর্যটন শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা বাংলাদেশ যদি কাজে লাগাতে পারে তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে আদর্শ হতে পারে। কক্সবাজারে পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে ২৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোয় প্রায় প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ হবে ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর