চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পোশাক আমদানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোস্ট্যাট-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ সময় বিশ্ববাজার থেকে ইইউর মোট পোশাক আমদানি বেড়েছে ১৪.২১ শতাংশ, যার আর্থিক পরিমাণ ৩২.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমদানির পরিমাণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৮৪ শতাংশ, যদিও গড় ইউনিট মূল্য কমেছে ১.৪১ শতাংশ।
এই চিত্রে বাংলাদেশকে দেখা যাচ্ছে শক্ত অবস্থানে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে বাংলাদেশ ইউরোপে ৮.০৭ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬.৫১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রপ্তানি আয় বেড়েছে ২৩.৯৮ শতাংশ, যেখানে রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে ১৯.৭১ শতাংশ এবং ইউনিট মূল্য ৩.৫৭ শতাংশ বেড়েছে যা অন্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও গঠনমূলক প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিযোগী দেশগুলোর রপ্তানির চিত্র : বাংলাদেশের পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যেও ইউরোপীয় বাজারে প্রবৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে। চীনের রপ্তানি বেড়েছে ২১.৪৯ শতাংশ, মোট আয় ৮.৩৯ বিলিয়ন ডলার। ইউনিট মূল্য বেড়েছে ৭.৩৭ শতাংশ। ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ২০.৫৮ শতাংশ, মোট আয় ২.০১ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের ২৩.৪২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আয় ১.৪২ বিলিয়ন ডলার। কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ৩১.৭৮ শতাংশ, মোট আয় ১.৫৬ বিলিয়ন ডলার। ভিয়েতনামের ১৫.৬২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও ৫.৬৮ শতাংশ ইউনিট মূল্য বৃদ্ধিসহ মোট রপ্তানি ১.৪৮ বিলিয়ন ডলার। তুরস্কের রপ্তানি কমেছে ৫.৪১ শতাংশ, যা ৩.১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয় : যদিও বাংলাদেশ ইউরোপের বাজারে চমৎকার প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, তবে বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা এবং প্রতিযোগীদের আগ্রাসী অবস্থান চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে চীন ও ভিয়েতনামের ইউনিট মূল্যের ব্যাপক বৃদ্ধি এবং ইউএস মার্কেটের অনিশ্চয়তা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নজর দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এবং অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ব্যবসার পরিবেশে বাধা সৃষ্টি করছে, যা সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি ও ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করছে।
এ বিষয়ে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বাংলাদেশকে বিদ্যমান প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাগুলো ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবর্তিত বিভিন্ন নিয়মনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে ২০২৫ ও তার পরবর্তী সময়ে ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানো যায়। তিনি আরও বলেন, সেই সঙ্গে নতুন বাজার অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে যাতে ইউরোপ ও আমেরিকান বাজারের ওপর অতিনির্ভরশীলতা কমিয়ে বৈচিত্র্যময় রপ্তানি নিশ্চিত করা যায়।