বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

সাইফ ইমন

ব্যাংকিং খাতের সংকট উত্তরণে চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা

আবদুল কাদের সিদ্দিকী সর্বাধিক পরিচিত এ কিউ সিদ্দিকী নামে ।  তার বড় ভাই জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা। আবদুল কাদের সিদ্দিকী ১৯৬৬ সাল থেকে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান  থেকে বহুবার সম্মানসূচক পদক পেয়েছেন। বাংলাদেশের প্রায় ১৫-২০টি ব্যাংক শুরু হয় এই মানুষটির  হাত ধরে। দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে। ছবি তুলেছেন - জয়ীতা রায় 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : দীর্ঘদিন ব্যাংকিং খাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এ খাতের বর্তমান অবস্থান কীভাবে দেখেন? বিশেষ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে-

এ কিউ সিদ্দিকী : খুব একটা ভালো অবস্থানে আছে- এটা বলা যাবে না। বর্তমানে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। ব্যাংকে যে অসাধু কাজ করা যায়, এটা আমি কোনো দিন শিখতে পারিনি। আমাদের সার্বক্ষণিক কাজ ছিল ব্যাংকের উন্নতি কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে।

আমার হাত দিয়ে ১৫ থেকে ২০টি ব্যাংক শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর লাইসেন্স দিয়ে থাকে। ফলে জনসাধারণের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এই দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করতে পারেনি বলেই মনে হয়। যদি পালন করতে পারত তাহলে আজ ৩৪টি নন ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই নষ্ট হতো না।

এটা মাথায় রাখতে হবে যে, কোনো প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করলে বা খারাপ করলে তাদের আটকাতে হবে। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এই বিচ্যুতি হতো না, অনিয়ম হতো না। হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। প্রথম থেকেই যদি কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হতো তাহলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এর ফলে জনসাধারণের আস্থা কমে গেছে। অন্যায়ভাবে লোপাট হয়ে যাওয়া টাকা কিন্তু ফেরত আসছে না। এখন তো নানা রকম সংকট চলছে বিশ্বজুড়ে যেমন- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। যে কারণে অর্থনীতি কোন দিকে যাবে, তা বলা যাচ্ছে না। সব রকম অনিয়ম রুখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও শক্ত অবস্থান নিতে হবে। অন্যদিকে দেশের শিক্ষার মান ভালো নয়। আবার যারা মেধাবী তারা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলায় ভালো ব্যাংকারদের ভূমিকা কী?

এ কিউ সিদ্দিকী : ভালো ব্যাংকারদের ভূমিকা ভালোই হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে আমি বলব, আমাদের নিয়োগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সৎ ও মেধাবীদের নিয়োগ দিতে হবে। মনিটরিং থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মেধাবী দেখেই লোক নিয়োগ দেয়। কিন্তু এখন ছোট অর্থনীতিতে প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংক অনেক বেশি হয়ে গেছে। অসাধুতা বেড়ে গেছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে দেখা যায়, নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রতি টান থাকে না। কাজ ভালোভাবে শিখে ওঠার আগেই দেখা যায় অন্য ব্যাংকে চলে যাচ্ছে।

কোনো প্রতিষ্ঠানেই থিতু হচ্ছে না। এটা অন্যতম প্রধান সমস্যা। ফলে যেটা হচ্ছে, কোনো প্রতিষ্ঠানকেই নিজের সেরাটা উজাড় করে দিচ্ছে না বা দেওয়া যাচ্ছে না। আন্তরিকতার অভাব থেকে যাচ্ছে। এই দিকগুলোতে ভালো ব্যাংকাররা নিত্যনতুন উদ্যোগ নিতে পারেন আরও ভালো করার জন্য। এই ভালোটা সবাইকে চাইতে হবে মন থেকে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : নতুন প্রজন্মের ব্যাংক নিয়ে আপনার পরামর্শ কী?

এ কিউ সিদ্দিকী : আমার মনে হয় অনেক ব্যাংক প্রয়োজন ছিল না। এখন আমাদের নানা ব্যাংক রয়েছে। ভারতের মতো দেশে শিডিওল ব্যাংক রয়েছে ৩৩/৩৪টি; সেখানে আমাদের দেশে ব্যাংক ৬০টি অর্র্থাৎ দ্বিগুণ।

যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যাংক হয়ে যায় সেখানে তো দুর্নীতি হবেই। টাকা পাচার হবেই। দুর্নীতি মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বেসরকারি ব্যাংকগুলো অনেক সময় দ্রুত মানুষের আস্থা হারায়। এমন কেন হয়?

এ কিউ সিদ্দিকী : এসব ব্যাংক মানুষের স্বার্থ দেখার চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ দেখছে বেশি। ফলে মানুষ আস্থা হারাচ্ছে। সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আমি মনে করি, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন খুবই জরুরি।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়?

এ কিউ সিদ্দিকী : বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর মানুষ আস্থা রাখে। কিন্তু তারা পেছনে পড়ে আছে বলে আমি মনে করি। বাংলাদেশ ব্যাংকই বেসরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু তারা যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে তখন দেখা দেয় বিপত্তি।

আগেই বলেছি, নানা রকম দুর্নীতি ও অনিয়মের  পেছনে অন্যতম কারণ হলো- প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ব্যাংক হওয়া। এখন আমরা জানি কত টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে। আমরা যারা পুরনো ব্যাংকার, আমরা যারা মূল্যবোধে বিশ্বাসী- এসব দেখলে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়।  তাই বলব, উত্তরণের জন্য ব্যাংকিং খাতে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। এটা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।

সর্বশেষ খবর