মিশরের সিনাই উপত্যকায় ২২৪ জন আরোহী নিয়ে রাশিয়ার কগালিমাভিয়া এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস-৩২১ বিমানটি ঠিক কি কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে। প্রাথমিকভাবে ইসলামিক স্টেট অাইএস'র স্থানীয় শাখা বিমানটি ভূপাতিত করার দাবি করে। তবে শুরু থেকেই তাদের এ দাবি প্রত্যাশান করেছে মিশর ও রাশিয়া উভয়। দেশ দুটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিমানটির দুর্ঘটনার পিছনে কারিগরি ত্রুটিকেই প্রধান কারণ হিসেবে দেখছেন। এমনকি বিমানটির ফিটনেস নিয়ে বিধ্বস্ত ফ্লাইট কেজিএল-৯২৬৮ এ-৩২১-২০০ বিমানটির কো-পাইলট তার স্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছিলেন বলে ওই নারী জানিয়েছেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আজ রাশিয়ায় একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
রুশ বিমানটির দুর্ঘটনার পিছনে অাইএস'র দবি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখান করেছেন মিশরের প্রধানমন্ত্রী শরীফ ইসমাইল। কারিগরি ত্রুটির কারণেই সম্ভবত বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে দেশটির সরকারের মত। রুশ পরিবহন মন্ত্রীও ইতোমধ্যে আইএসের দাবি 'বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে প্রত্যাখান করেছেন।
এদিকে, বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মিশরীয় কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এ তদন্তে রুশ ও ফরাসি বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছেন। সেইসঙ্গে তদন্তে সহায়তা করছেন প্যারিসভিত্তিক এয়ারবাস বিমানের বিশেষজ্ঞরাও। বিমানটির ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে ও এর তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার দেশের প্রধানমন্ত্রী দিমিত্রি মেদভেদেভকে ঘটনার তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। দুর্ঘটনার পরপরই মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি পুতিনকে ফোন করে তার শোক জানিয়েছেন বলে ক্রেমলিন জানায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার রুশ প্রতিনিধি সের্গেই ল্যাভরভকে ফোন করে এ ঘটনায় সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন ও প্রয়োজনে মার্কিন সহায়তার কথা জানিয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর একথা জানায়।
উল্লেখ্য, ২২৪ যাত্রী নিয়ে রাশিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমানটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের পুলকোভো বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে মিশরের লোহিত সাগরের জনপ্রিয় অবকাশযাপন কেন্দ্র শারম আল শেখের একটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে। মস্কো সময় গতকাল শনিবার ৬টা ৫১ মিনিটে বিমানটি মিশরের শারম আর শেখ থেকে উড্ডয়নের ২৩ মিনিট পরই সাইপ্রাস এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে এবং রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রুশ বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষ রজাভিয়াতসিয়া এক বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে।এর ২৩ মিনিট পরই এটি দেশটির এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ হারায়। ইতোমধ্যে বিমানটির সব আরোহীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। অারোহীদের মধ্যে সাতজন ছিল ক্রু। আর বাকিদের বেশিরভাগই রুশ পর্যটক। এদের মধ্যে মাত্র ৪ জন ইউক্রেনের নাগরিক। নিহতদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জন শিশু ও ১৩৮ জন নারী ছিল বলে রুশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নিহতদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২৯ জনের লাশ উদ্ধার করে মিশরের রাজধানী কায়রোতে আনা হয়েছে। আজ রবিবার-ই মরদেহগুলো রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে পাঠানোর কথা রয়েছে। লাশগুলো শনাক্তের জন্য ইতোমধ্যে নিহতদের ১১৫ জন স্বজন তাদের ডিএনএ স্যাম্পল দিয়েছেন। পিটার্সবার্গের পুলকোভো বিমানবন্দনে এ লক্ষ্যে একটি সেল খোলা হয়েছে যেখানে নিহত আরোহীদের স্বজনরা জড়ো হচ্ছেন। খবর এপি, বিবিসি ও সিএনএন'র
বিডি-প্রতিদিন/১ নভেম্বর ২০১৫/শরীফ