ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোটে জঙ্গি হামলার জেরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হল। নতুন বছরের শুরুতেই ভারত জুড়ে হামলার আশঙ্কা করেছিল দেশটির ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। হামলার আশঙ্কায় ইতোমধ্যেই দেশটির বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, শপিং মল, জনবহুল এলাকায় সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
সূত্রে খবর, গোয়েন্দাদের ধারণা জঙ্গিদের নিশানা হতে পারে মৈত্রী এক্সপ্রেসের মতো ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী আন্তর্জাতিক ট্রেনও। পাঠানকোটের হামলার পরিপ্রেক্ষিতেই মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে পূর্ব রেলের কর্মকর্তারা একটি বৈঠকও করেন। এরপরই ট্রেনটির নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলকাতা থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত যাত্রাপথে ট্রেনটির মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যদিও ট্রেনে নিরাপত্তা রক্ষীর সংখ্যা কত বৃদ্ধি হয়েছে তা নিয়ে কৌশলগত কারণেই নিশ্চিত করে কেউ কিছু জানাননি। তবে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ কর্মকর্তা রবি মহাপাত্র বলেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেসের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এর বেশি কিছু বলা যাবে না’।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ‘চিৎপুরে যে প্ল্যাটফর্মে মৈত্রী ট্রেনটি থাকে সেখানে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা আছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোন যাত্রীরই সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। কলকাতা থেকে গেদে পর্যন্ত ভারতীয় সীমানার মধ্যে কোন স্থানে যাতে ওই ট্রেনটির গতিরোধ না করা হয় তার জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। গেদে পৌঁছোনার পরেও ওই ট্রেনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ)-এর জওয়ানরা। আবার বাংলাদেশের দর্শনা পৌঁছোনোর পরেও সেদেশের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদস্যরা সেটিকে পরীক্ষা করে’।
মৈত্রী এক্সপ্রেসই হল ভারতের মাটি থেকে ছাড়া একমাত্র আন্তর্জাতিক ট্রেন, যেটি সরাসরি অন্য রাষ্ট্রে গিয়ে পৌঁছয়। ২০০৮ সালের এপ্রিল-এ যাত্রা শুরুর পর থেকেই এই ট্রেনটি কলকাতা (চিৎপুর) স্টেশন থেকে ছেড়ে সোজা চলে যায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। ভারতীয় সীমানায় মৈত্রী এক্সপ্রেসের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব থাকে পূর্ব রেল। কিন্তু ভারতের দিল্লি থেকে পাকিস্তানের লাহোরের মধ্যে সমঝোতা এক্সপ্রেস চলাচল করলেও ওই ট্রেনের যাত্রীদের পাঞ্জাবের আত্তারি স্টেশনে নেমে পাকিস্তানে যাওয়ার সময় ট্রেন বদলাতে হয়। সেদিক দিয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেসের একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গিদেওর সফট টার্গেট এই মৈত্রী এক্সপ্রেস।
প্রসঙ্গত, নতুন বছরের শুরুতে গত ২ জানুয়ারি পাকিস্তান সীমান্ত থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে পাঠানকোটের বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। অবশেষে টানা ৬০ ঘণ্টা ধরে গোলাগুলির লড়াইয়ের পর ৬ হামলাকারীর মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ওই হামলায় নিহত হয় সাত সেনা জওয়ানও, আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন জওয়ান। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে এই হামলার পিছনে পাক মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদের হাত রয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। যদিও সোমবার বিকেলে হঠাৎই জিহাদি কাউন্সিল নামে এই হামলার দায় স্বীকার করে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা