মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে আগ্রহী বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী সমাবেশ থেকে নিরাপত্তারক্ষী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হলো এক মুসলিম নারীকে। শনিবার খবরটি সকল টিভি ও সংবাদপত্রে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে প্রচার ও প্রকাশিত হয়। নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প একেক সময় একেক সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। তার সর্বশেষ আক্রমণের শিকার হলেন মুসলমানেরা।
ঢালাওভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসবাদের সমর্থক ভাবছেন এই ধনকুবের রাজনীতিক। আর এসব উদ্ভট এবং আমেরিকার চেতনা ও মূল্যবোধের পরিপন্থি বক্তব্য-বিবৃতির মধ্য দিয়ে এখন পর্যন্ত ট্রাম্পই রিপাবলিকান পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন। সকল জনমত জরিপেই এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।
সিরিয়া থেকে প্রাণ বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ছুটে আসা লোকজনকে আইএস জঙ্গিদের সমর্থক হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। সে মন্তব্যের নিরব প্রতিবাদ জানাতে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন হিজাব পরিহিতা ৫৬ বছর বয়েসী রোজ হামিদ। আরো অনেকের সাথে রোজ হামিদ বসেছিলেন। তবে হিজাব পরা আর কেউ ছিলেন না। ৮ জানুয়ারি শুক্রবার রাতে এ সভা হয় সাউথ ক্যারলিনার রোড হিলে। ট্রাম্পের বক্তৃতা চলছিল। সকলেই মনোযোগ দিয়ে তা শুনছিলেন। সে সময় নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রোজ হামিদ। একটি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এটেন্ডেন্ট রোজ হামিদের উপস্থিতি সহ্য হচ্ছিল না তার পাশে বসে থাকা লোকজনের। তারা তাকে তিরস্কার ও বিদ্রুপ করতে থাকেন। সে সময় অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় রোজ হামিদ তাদের জানান তার সেখানে উপস্থিত হবার কারণ। কিন্তু কেউই সন্তুষ্ট হতে পারেননি। অধিকন্তু তার কাছে বোমা রয়েছে বলে কেউ একজন উচ্চস্বরে বলতে থাকেন। মুহূর্তে পরিবেশ অচেনা হয়ে যায়। ছুটে আসে নিরাপত্তা রক্ষীরা। এরপর ওই ভবন থেকে জোরপূর্বক বের করে দেয়া হয় এই রোজ হামিদকে।
সিএনএন টিভির প্রতিনিধিরা তাকে অনুসরণ করেন এবং ভবনের বাইরে সিএনএন’র প্রশ্নের জবাবে রোজ হামিদ বলেছেন, ‘এটি সত্যি দু:খজনক যে, আমাকে নিরবেও প্রতিবাদ জানাতে দেয়া হলো না। আমার কাছে নামি বোমা রয়েছে-এমন কথা বলেছেন রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকরা।’
রোজ হামিদকে বের করে দেয়ার পর ট্রাম্প বলেন, ‘এখানেও আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং আমাদের বিরুদ্ধে হিৎসা-বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব বিশ্বাস করা যায় না। এভাবেই ওরা আমাদের পরিবেশ নষ্ট করছে’।
রোজ হামিদ সিএনএনকে আরও বলেছেন, ‘সভাস্থলে আমার প্রতি কটু মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়ার পরই রিপাবলিকান পার্টির অন্য সমর্থকরা অনুতাপ প্রকাশ এবং সে জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাকে সেখানে এক মুহূর্তও থাকতে দেয়নি।’
হামিদ উল্লেখ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ঐসব কথাবার্তা দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যবোধের পরিপন্থি।’
উল্লেখ্য, এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানান ট্রাম্প। রোজ হামিদের গায়ে ছিল টি শার্ট। সেখানে লেখা ছিল ‘সালাম-আমি এসেছি শান্তির জন্য।’ তিনি ট্রাম্পের সাথে সরাসরি কথা বলতে চেয়েছিলেন সিরিয়ার শরনার্থীদের সম্পর্কে ঢালাও অপবাদের ব্যাপারে।
সিএনএন এ সংবাদটি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করছে শনিবার সকাল থেকে। শীর্ষস্থানীয় মার্কিন দৈনিকগুলোতেও প্রকাশিত হয়েছে গুরুত্বের সাথে।
বিডি-প্রতিদিন/১০ জানুয়ারি, ২০১৫/মাহবুব