মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঘটনাক্রম ফের নাটকীয় মোড় নিল। ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে জোরালো আওয়াজ তুলেছে। ইসলামিক স্টেটের অজস্র সমর্থক বিভিন্ন জিহাদি ওয়েবসাইটে এখন ট্রাম্পের সমর্থনে গলা ফাটাচ্ছেন। সিরিয়ায় বসে থাকা আইএসের বড় কর্তারাও নাকি চাইছেন ট্রাম্পই ক্ষমতায় আসুন। এই অবস্থায় ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ শুনে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
প্রশ্ন উঠেছে, চরম শত্রূর জয় এবং ক্ষমতাদখল কেন চাইছে আইএস। ট্রাম্পের পরাজয়, মৃত্যু এবং নিন্দাই যেখানে কাম্য, সেখানে কেন তারা চাইছে ট্রাম্প জিতুক? এমন প্রশ্নের উত্তরে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিয়েছে আইএস সমর্থকরা। তাদের ব্যাখ্যা, ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু র্যাডিক্যাল ইসলামের বিদ্বেষীই নয়, জঙ্গি বা মৌলবাদী ইসলামের পাশাপাশি তীব্র মুসলিম বিদ্বেষীও বটে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে তিনি কথামতো অভিবাসী সাধারণ মুসলিমদেরও আমেরিকা থেকে তাড়াবেন। উদার মনোভাবাপন্ন, শিক্ষিত মুসলিমরাও ট্রাম্পের টার্গেট। এতে মার্কিন নাগরিক মুসলিমরাই ট্রাম্পের সময়কালিন আমেরিকা বিদ্বেষী হয়ে উঠবেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে ধর্মীয় মেরুকরণ বাড়বে। বাড়বে মুসলমান বিদ্বেষও। আমেরিকার বহুজাতিক সহাবস্থানের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে। ফলে উদার, শিক্ষিত মার্কিন মুসলমানদের মধ্যে ইসলামিক স্টেটের প্রতি সহানুভূতি এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করার প্রবণতা বাড়বে। অজস্র শিক্ষিত মুসলিম যুবক জঙ্গি-ইসলামের খাতায় নাম লেখাবেন। এভাবে লাভ হবে আইএসেরই। বাড়বে মুজাহিদের সংখ্যা। তাই ট্রাম্প যাতে ক্ষমতায় আসেন সেজন্য অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রাম্পের সমর্থনে গলা ফাটাচ্ছে আইএস সমর্থকরা। নজিরবিহীন এই ঘটনায় অবাক ট্রাম্পের সমর্থকরাও।
টেলিগ্রাম নামে একটি মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে আইএস সমর্থকরা ও জঙ্গিরা জানিয়েছে, প্রায়ই ট্রাম্প হুমকি দেন, ক্ষমতায় এল ইসলামিক স্টেটকে নরক দেখিয়ে ছাড়ব। ওদের নিশ্চিহ্ন করতে শক্তিশালী আঘাত হানা হবে। দরকারে পরমাণু অস্ত্রও ব্যবহার করা হবে। ট্রাম্প আগেও হুমকি দিয়েছেন, ক্ষমতায় এলে ৩০ হাজার অতিরিক্ত মার্কিন সেনা সিরিয়া ও ইরাকে পাঠানো হবে আইএসকে নিশ্চিহ্ন করতে। ট্রাম্পের ফরমুলা ছিল, ইজরায়েল ও রাশিয়াকে সঙ্গে নিয়ে দুনিয়া জুড়ে মুসলিম জঙ্গিদের মোকাবিলা করা হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের শর্ত মেনে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেও রাজি ৭০ বছরের এই মার্কিন ধনকুবের ট্রাম্প। তাই ট্রাম্পের বিদ্বেষ ও হুমকি যত বাড়বে ততই আমেরিকা ও বহির্বিশ্বে জমি শক্ত হবে আইএসের। জনপ্রিয়তাও বাড়বে তাদের।
আইএস সমর্থকরা ছবি-সহ কখনও নিজেদের বক্তব্য পোস্ট করছে, কখনও টুইট করছে, 'আল্লার মেহেরবানি হবে যদি আমেরিকায় ট্রাম্প ক্ষমতায় আসে। একটা চূড়ান্ত ধর্মযুদ্ধ হোক। একদিকে ট্রাম্প-পুতিন ও পশ্চিমি সভ্যতা। আরেকদিকে শুধু মুসলিমরা। দেখা যাবে কার কত দম।' আইএস সমর্থকদের ব্যাখ্যা, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্ষমতায় এলে তাদের ক্ষতি হবে। কারণ ওবামা, হিলারি-সহ ডেমোক্র্যাটরা ইসলামের মানবতার দিকটি বার বার তুলে ধরেছেন। উদার, শিক্ষিত, গণতান্ত্রিক মানবতাবাদী মুসলিমদের নিয়ে তারা চলতে চান। তারা মোটেও মুসলিম বিদ্বেষী নন। ফলে হিলারি ক্ষমতায় এলে ধর্মীয় মেরুকরণ সম্ভব হবে না। মুসলিম যুবকরাও জেহাদে আকৃষ্ট হবে না। ইসলামিক স্টেটও জনপ্রিয় হবে না। জেহাদের অক্সিজেন হল মুজাহিদরা। ঘৃণা না ছড়ালে মুজাহিদ তৈরি হবে কোথা থেকে? আর ঘৃণা তৈরিতে সাহায্য করবে ট্রাম্পের মুসলিম বিদ্বেষ, এমনটাই ধারণা আইএস সমর্থকদের।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন
বিডি প্রতিদিন/৩০ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-১৪