আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর শুরু হবে ৫৮বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। পুরো বিশ্ব তাকিয়ে সেদিকে। যেখান থেকে আমেরিকানরা বেছে নেবেন তাদের ৪৫তম প্রেসিডেন্টকে। তাই আমেরিকানরা আসলে কাকে চাচ্ছেন তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে বিশ্ববাসীকে। কিন্তু তার আগেই বিভিন্ন দেশ নিজেদের মতো করে প্রধান দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন। এবার চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, দু'জনের মধ্যে কাকে চায় বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলো।
যুক্তরাজ্য : ইতিমধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে একবার বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। ট্রাম্প যখন বলেছেন, মুসলমানদের জন্য লন্ডনে যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, 'ট্রাম্প যুক্তরাজ্যকে পরিমাপ করতে পারেননি। তিনি পুরোপুরিই ভুল।’ তাছাড়া হিলারির মতো তেরেসা মেও একজন নারী। তাই অনুমান করা যায়, ব্রিটিশদের পছন্দ বিতর্কিত ট্রাম্প নয়, হিলারিই।
রাশিয়া : নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষাণার পর থেকে ট্রাম্পের মুখে রাশিয়া প্রীতির কথা শোনা গেছে। প্রকাশ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট (পুতিন) আমাদের প্রেসিডেন্ট (ওবামা) থেকে অনেক ভালো। নিজ দেশের ওপর তার অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’ এরপরই অভিযোগ ওঠে রাশিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটনের পরিবর্তে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই চাইছে রাশিয়া, এমন গুঞ্জন ওঠে। এর পালে হাওয়া মেলে যখন মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে রাশিয়া সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে, এমন অভিযোগ ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই একমাত্র নেতা যিনি প্রকাশ্যে চাইছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে আসুক। অর্থাৎ এতে স্পষ্ট বৈশ্বিক রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করার জন্য রাশিয়ানদের কাছে ট্রাম্পই প্রথম পছন্দ।
চীন ও ভারত : বারাক ওবামার অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মনোযোগ ইউরোপ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বেশি স্থাপন করে। হিরারিও একই রকম নীতি চালিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে দৃঢ় কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতেই তিনি আগ্রহী। অন্যদিকে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের চাকরি চুরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তিতে প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন চীনের বিরুদ্ধে। তাই সঙ্গত কারণে তারা ট্রাম্পের প্রতি বিরক্ত এটা অনেকটা অনুমিত।
ইউরোপ: অঞ্চল হিসেবে দেখলে ইউরোপের খুব কম দেশই মনে করে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হোক। বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানির মতে, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে ইউরোপ বিশেষ করে তাদের জন্য মঙ্গলজনক হয়।
মধ্যপ্রাচ্য : ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তিপ্রক্রিয়া, সিরিয়া পরিস্থিতি ও ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সবকিছুই মার্কিন নির্বাচনের ওপর নির্ভরশীল। পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে বারাক ওবামার চুক্তি, জঙ্গি সংগঠন আইএসকে দমনে সেনা পাঠানোর হুমকি এবং ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব আরব দেশগুলোকে হতাশ করেছে। তবে ইসরাইল এ ব্যাপারে খুব খুশি। তাই ট্রাম্পকেই তারা বেশি করে চাচ্ছে। তবে হিলারি হলেও তারা যে খুব হতাশ হবে, তা নয়।
ন্যাটো : সামরিক জোট ন্যাটোর মনে করে, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে ট্রান্স-আটলান্টিক ট্রিটি তথা ন্যাটোর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারেন। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিকবার বলেছেন, তিনি ন্যাটোর ব্যয়ের অধিকাংশ শেয়ার বহন করবেন না এবং ন্যাটোভুক্ত প্রত্যেক দেশকে সমান ব্যয় বহন করতে হবে। তাই বোঝা যায় তাদের চাওয়া হিলারি।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ নভেম্বর, ২০১৬/মাহবুব