পাচারের আগেই মারা যেত যে শিশুরা, তাদের স্রেফ পুঁতে ফেলা হত মাটিতে। লোকচক্ষুর আড়ালে। ভারতের মছলন্দপুরে ‘সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর পিছনের মাঠে সেই ‘কবরখানা’ খুঁড়ে গতকাল তেমনই দুই শিশুর কঙ্কাল আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাড়গোড় উদ্ধার করল সিআইডি।
এ দিন সকালে শিশুপাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত ওই ট্রাস্টের মালিক পলি দত্ত এবং সম্পাদক সত্যজিত সিংহকে নিয়ে মছলন্দপুরে যান তদন্তকারীরা। আগেই সিআইডি অফিসাররা খবর পেয়েছিলেন ট্রাস্টের পিছনের মাঠে অনেক শিশুকে পুঁতে রাখা হয়েছে। সেই খবর পেয়েই দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান গোয়েন্দারা। তার পর শুরু হয় মাটি খোঁড়ার কাজ। খুঁড়তেই সকলের চোখ কপালে। গোয়েন্দাদের অনুমান, ৭-৮ মাসে আগে এগুলো কবর দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সুজিত দত্ত মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত এক নারীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাকে জেরা করে জানা যায়, তার মাধ্যমেই পাচারকারীরা মৃত শিশু ও ভ্রূণ বিভিন্ন জায়গায় পুঁতে ফেলত। কোথায় পুঁতে রাখা হত সে বিষয়ে জানতে গিয়েই উঠে আসে ট্রাস্টের পিছনের মাঠের কথা।
সিআইডির কর্তাদের একাংশের অনুমান, শিশু পাচারের পাশাপাশি বেআইনি গর্ভপাত করাত বসিরহাটের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বাদুড়িয়ার নার্সিংহোম। তা ছাড়া, গ্রাম থেকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে যে সব প্রসূতিকে আনা হতো নার্সিংহোমে, তাদের সন্তান অনেক সময়ে মারা যেত। পাচারের ধকল সহ্য করতে না পেরেও মৃত্যু হতো কোনও কোনও শিশুর। বিস্কুটের বাক্স, নোংরা-অস্বাস্থ্যকর জায়গায় লুকিয়ে রাখার জন্যও মৃত্যু হতো কিছু শিশুর। ওই সব শিশুর দেহ, ভ্রূণ পুঁতে ফেলা হতো মাটিতে। আর সুস্থ-সবল শিশুরা নানা হাত ঘুরে বিক্রি হয়ে যেত দেশ-বিদেশের নিঃসন্তান দম্পতিদের ঘরে।
শিশু পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বুধবার রাত পর্যন্ত ধরা পড়েছে ১৩ জন। ৮ জনকে আগেই তোলা হয়েছে আদালতে। বৃহস্পতিবার ৫ জনকে আনা হয় বসিরহাট আদালতে।
গত ২১ নভেম্বর বাদুড়িয়ার সোহান নার্সিংহোম থেকে তিনটি সদ্যোজাতকে উদ্ধার করে সিআইডি। গ্রেফতার করা হয় নাজমা নামে এক নারীসহ আট জনকে। তাদের জেরা করে কলকাতার দু’টি নার্সিং হোমের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। সেখানে হানা দিয়ে গ্রেফতারও করা হয় কয়েক জনকে। সেই সূত্র ধরেই ঠাকুরপুকুরের পূর্বাশা হোম থেকে শুক্রবার ১০টি শিশুকে উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা।