ববি ডোডেভস্কি মেসিডোনিয়ার সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর একজন সদস্য। অন্য এক সহকর্মীর পরিবর্তে সেদিন তার ডিউটি পড়েছিল সীমান্তে। অন্যদিকে ইরাকে সহিংসতার কারণে পালিয়ে আসা হাজার হাজার শরণার্থী সেদিন মেসিডোনিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সীমান্তের দরজা বন্ধ। এই শরণার্থীদের মাঝে ছিলেন নোরা আরকাভাজি নামে ২০ বছরের একটি মেয়ে। একাধিক ভাষায় দক্ষতা তার। চোখে সমুদ্র বিস্তৃত মায়া। সেই মায়ায় জড়িয়ে যান সীমান্তরক্ষী ববি ডোডেভস্কি। এরপর...
নিয়তি বদলে দিয়েছে নোরার জীবন। আজ সে সেই সীমান্ত রক্ষী ববি ডোডেভস্কির স্ত্রী। চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। উত্তর মেসিডোনিয়ার শহর কুমানোভোতে দু'জনের বিয়ে হয়। ডোডেভস্কি অর্থোডক্স খ্রীষ্টান চার্চের অনুসারী। অন্যদিকে নোরা কুর্দি মুসলিম। কিন্তু ধর্ম কোন বাধা হয়নি তাদের প্রেম আর বিয়েতে।
বিশ বছর বয়সী নোরা আরকাভাজি ইরাকের ডিয়ালা প্রদেশ ছাড়েন ২০১৬ সালের শুরুতে। তখন সেখানে প্রচন্ড সহিংসতা চলছে। পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নোরা ইরাক থেকে তুরস্ক, সেখান থেকে নৌকায় গ্রীসের লেসবস দ্বীপ হয়ে মেসিডোনিয়ার সীমান্তে পৌঁছান। বহু শরণার্থী তখন এই একই পথ ধরে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছে।
যখন তারা সীমান্তে অপেক্ষা করছে, তখন তাদের মেসিডোনিয়ার ওপর দিয়ে সার্বিয়ায় যেতে দেয়া হবে কীনা- এ নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে।
ইউরোপে ঢুকতে চাওয়া শরণার্থীদের মুখের ওপর তখন একের পর এক দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশ। নোরার স্বপ্ন ছিল, তারা জার্মানিতে যাবে, সেখানে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে বসবাস করবে। কিন্তু প্রেমের বাঁধনে বাঁধা পড়ে মেসিডোনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়তে হলো নোরার।
কীভাবে হলো পরিচয়? নোরা ছয়টি ভাষায় পারদর্শী। যখন মেসিডোনিয়ার সীমান্তে তারা আটকে আছে, তখন নোরাকে পাঠানো হলো ডোডেভস্কির কাছে। কারণ নোরা ভালো ইংরেজী বলতে পারে। নোরা দেখা করলেন ডোডেভস্কির সঙ্গে। প্রথম দেখাতেই সৈনিকের মনের মধ্যে আলোড়ন তৈরি হলো। ডোডেভস্কির মনে হলো নোরার চোখে এমন কিছু আছে, যেখানে লেখা রয়েছে তার নিয়তি।
দু'জনের মধ্যে প্রথম দেখাতেই যে প্রেমের মতো কিছু ঘটে গেছে, সেটা টের পেয়ে গেলেন ডোডেভস্কির এক নারী সহকর্মী। তিনি ডোডেভস্কিকে ঠাট্টা করে বলছিলেন, "তুমি তো মনে হয় কাজে মন বসাতে পারছো না। তোমার মগজটা মনে হয় কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে।"
ডোডেভস্কির ওই সহকর্মীর অনুমানকে উড়িতে দিতে পারেননি।
মেসিডোনিয়ার এক ট্রানজিট ক্যাম্পে নোরা রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করলেন। সেখানে যেতেন ডোডেভস্কি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে দু'জনের প্রণয়ের সম্পর্ক গভীরতর হতে থাকলো।
ডোডেভস্কি নোরাকে নিয়ে গেলেন কাছের শহরের বাজারে। নিয়ে গেলেন নিজের মায়ের কাছে। অন্যদিকে ডোডেভস্কি যেভাবে শরণার্থী শিশুদের সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতেন, তা মুগ্ধতা ছড়াতো নোরার চোখে।
তারপর এপ্রিলে এক রেস্টুরেন্টে খেতে খেতে ডোডেভস্কি নোরাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন।
নোরা বার বার বলছিলেন, তুমি কি আমার সঙ্গে রসিকতা করছো।
ডোডেভস্কি দশ বার করে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে জানালেন, এটা মোটেই রসিকতা নয়।
নোরার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা শেষ পর্যন্ত জার্মানিতে ঢুকতে পেরেছিলেন। কিন্তু প্রেমের ফাঁদে আটকে পড়ে নোরা রয়ে গেলেন মেসিডোনিয়াতেই। সেখানে ডোডেভস্কির আগের তিন সন্তান সহ তাদের পাঁচ জনের সুখের সংসার। শীঘ্রই তাদের সঙ্গে যোগ দিতে আসছেন পরিবারের ষষ্ঠ সদস্য।
হাসতে হাসতে নোরা জানান, "আমি এখন সন্তান সম্ভবা, চার মাস চলছে"। সূত্র: বিবিসি
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ