পশ্চিম এশিয়ার বর্তমান অবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়, পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে বিদেশি সেনাদের উপস্থিতি এ অঞ্চলের দেশগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নানা সংকট তৈরি করেছে যার পরিণতিতে ব্যাপক নিরাপত্তাহীনতা ও হুমকি দেখা দিয়েছে।
ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি পারস্য উপসাগরে বু মুসা দ্বীপে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করে বলেছেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমেই কেবল আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত করা যাবে এবং বিদেশিদের উপস্থিতি নৈরাজ্য, হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না।
আমেরিকা ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি ইরান ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের দূরত্ব ও উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এ কারণে আমেরিকা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের নিরাপত্তা সহযোগিতার বিরোধিতা করছে এবং মিথ্যা প্রচার চালিয়ে ইরানকে এ অঞ্চলের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরছে। নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে আমেরিকা পশ্চিম এশিয়ায় প্রবেশ করলেও আজ পর্যন্ত তারা শান্তি ফিরিয়ে আনতেতো পারেনি বরং ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তানসহ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন উপস্থিতির কারণে দুটি নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রথমত, অস্ত্র প্রতিযোগিতা। মার্কিন সরকার বিশেষ করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উস্কে দেয়ার পাশাপাশি ওইসব দেশের নিরাপত্তা আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সেই সুযোগ নিচ্ছে আমেরিকা। অথচ পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে এমন এক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি যেখানে এ অঞ্চলের সব দেশের অংশ গ্রহণ থাকবে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক রাই আল ইয়াওম লিখেছে, আমেরিকা ও ইসরাইলের উস্কানিতে এ অঞ্চলের কোনো কোনো দেশ ইরানকে হুমকি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। পশ্চিম এশিয়ায় নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির জন্য তারা এ পর্যন্ত কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হরমুজগান প্রণালীর ওপর ইরানের কর্তৃত্বের ব্যাপারে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছে। গত সপ্তাহে আমেরিকার একটি বিমানবাহী জাহাজ পারস্য উপসাগরে প্রবেশ করেছে।
স্পুতনিক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে আমেরিকা পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্রথম বিমানবাহী জাহাজ ওই এলাকায় প্রবেশ করল। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী রেজা তাঙ্গসিরি পারস্য উপসাগরে মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ প্রবেশের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ইরান মার্কিন জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে এবং আমরা বিদেশি সেনাদের প্রতিটি তৎপরতার ওপর নজর রাখছি।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় ইরানের অবস্থান খুবই শক্তিশালী। তবে ইরান এ অঞ্চলের কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়। কারণ ইরানের সামরিক নীতি হচ্ছে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করা। ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধানও তার বক্তব্যে এ বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/০২ জানুয়ারি ২০১৯/আরাফাত