চন্দ্রযান-১ এর পর দ্বিতীয়বারের মতো চন্দ্রযান-২ চাঁদে পৌঁছানোর মিশনে ব্যর্থ হলো ভারত। মাথা নিচু করে বসে রয়েছেন চন্দ্রযান ২-এর সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছরের পরিশ্রম, স্বপ্ন, আশা, পরিকল্পনা ও গবেষণায় ইতি টেনে দিল আশঙ্কার ১৫ মিনিট। চাঁদে পা ফেলার অন্তিম ১৫টা মিনিটই ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের। আর সেই আশঙ্কাই শেষমেশ সত্যি হল। চাঁদের পিঠে পা রাখার থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকাকালীনই হারিয়ে গেল ভারতের বিপুল অর্থব্যয় তৈরি চন্দ্রযান-২ ল্যান্ডার বিক্রম। কোনওভাবেই আর যোগাযোগ করা গেল না তার সঙ্গে।
এ ঘটনায় নিজের হতাশা এবং আবেগকে চেপে রাখতে পারলেন না কে সিভন। মোদির কাঁধে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদেছেন তিনি। ভেঙে পড়া সিভনকে সামলে নেন মোদি। তাকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিয়ে মোদি বলেন, ‘বি কারেজিয়াস। (সাহসী হোন)। জীবনে ওঠা পড়া লেগেই থাকে। যে সাফল্য আপনারা অর্জন করেছেন, তা কম নয়। গোটা দেশ আপনাদের জন্য গর্বিত। আপনারা আবারও দেশকে গর্বিত করবেন, আমি নিশ্চিত।
এদিকে ভারতের এই ব্যর্থতায় খোঁচা দিতে পিছ পা হচ্ছে না চিরশত্রু প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাকিস্তানিরা নানাভাবে বিষয়টি নিয়ে কটু কথা বলছেন ভারতকে নিয়ে। হাসি-ঠাট্টা ও ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে ভারতের এই ব্যর্থতাকে নিয়ে উপহাস করছে তারা। চন্দ্রযান ২ প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় যে দারুণ খুশি হয়েছে তারা, সেটাই স্পষ্ট। এ নিয়ে টুইট করে উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করলেন পাকিস্তানের বিজ্ঞান মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরিও।
ভারতীয় বিজ্ঞানীদের পরিশ্রম আর সাহসকে যেখানে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে ভারতবাসী, সেখানে কটাক্ষ করে টুইট করেছেন এই পাকিস্তানি মন্ত্রী। মিশন চন্দ্রযান ২ নিয়ে একের পর এক টুইট করে ভারতকে রীতিমতো অপমান করতে থাকেন ফাওয়াদ খান। তিনি লেখেন, ‘‘অঅঅ… যে কাজটা পারো না, সেটা করারই দরকার নেই। প্রিয় ‘এন্ডিয়া।’’ ইন্ডিয়ার বানান বদলে ‘এন্ডিয়া’ লিখে মন্ত্রী বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, ভারতের মিশন শেষ হয়ে গিয়েছে।
টুইটটি পোস্ট হতেই এই পাকিস্তানি বিজ্ঞান মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হন ভারতের নেটিজেনরা। একজন কটাক্ষের সুরেই লেখেন, মজার বিষয় হল, চন্দ্রযান ২ ফাওয়াদ চৌধুরিকে সারারাত জাগিয়ে রেখেছিল। তবে শুধু ভারতীয়রাই নয়, পাকিস্তানের বহু নেটিজেন দ্বারাও সমালোচিত হয়েছেন মন্ত্রী। এক নেটিজেন লেখেন, নিজেদের লজ্জায় ফেলা বন্ধ করুন। ভারত অন্তত চাঁদে পা রাখার চেষ্টা করেছে। আর আমরা চাঁদকে দেখার জন্য লড়াই করতে থাকি। যে কোনও দেশের বৈজ্ঞানিক
প্রচেষ্টার প্রশংসা করা উচিত। আর সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত।
এসব সমালোচনায় অবশ্য দমানো যায়নি ফাওয়াদ চৌধুরিকে। এক নেটিজেনের টুইটে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ঘুমিয়ে পড়, চাঁদের বদলে ওই খেলনাটা মুম্বাইয়ে নেমেছে। আবার অন্য এক টুইটে লিখেছেন, ‘ভারতীয়রা অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। যেন আমার জন্য মিশন ব্যর্থ হয়েছে। আমি বলেছিলাম অকারণে ৯০০ কোটি টাকা নষ্ট করতে? এবার মাথা ঠাণ্ডা করে ঘুমিয়ে পড়ুন।’ এখানেই থামেননি তিনি। ইসরো তথা দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ নিয়েও বক্তব্য রেখেছেন। বলেছেন, মোদির কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি রাজনীতিবিদ নন, মহাকাশচারী। লোকসভায় মোদিকে প্রশ্ন করা উচিত, কেন গরিব দেশে ৯০০ কোটি টাকা নষ্ট এভাবে করা হল। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক