বিক্ষোভে উত্তাল হংকং। রক্তারক্তি কাণ্ড সিটিপ্লাজায়। ছুরি নিয়ে এলোপাথাড়ি হামলা, পুলিশ-জনতা যুদ্ধ- সপ্তাহান্তের বিক্ষোভের আঁচ ছড়াল কর্মব্যস্ত দিনেও। মানবশৃঙ্খল তৈরি করে বিক্ষোভকারীরা গর্জে উঠল রাজপথে। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে হংকং-এর কোনও কোনও এলাকায় কার্ফু জারি করার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার এক বিক্ষোভকারীকে গুলি করেছিল পুলিশ। তার আগে, গত রবিবার পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে একটি চোখ হারিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এক নারী সাংবাদিক। পর পর এই দু’টি ঘটনার পর থেকেই পুলিশ-বিরোধী বিক্ষোভ আরও বেড়েছে হংকংয়ে। পুলিশ জানিয়ছে, রবিবার একটি রেস্টুরেন্টে হামলা চালায় কয়েকজন আততায়ী। প্রত্যেকের পরনে ছিল সাদা টিশার্ট। এলোপাথারি ছুরি হামলায় জখম হন নারী থেকে শিশু। গুরুতর জখম হন ডেমোক্র্যাটিক ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সেলার অ্যান্ড্রু চিউ।
এদিকে রবিবার থেকে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বেঁধেছে বিক্ষোভকারীদের। শা তিন, তাই পো, তুয়েন মুনের মতো শপিং মলে, মেট্রো স্টেশনে, শহরের রাজপথে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে স্লোগান তুলেছিলেন গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা। তাইকু শিংয়ের সিটিপ্লাজায় বিক্ষোভকারীদের মানবশৃঙ্খল ভাঙতে গেলে উত্তেজনা চরমে ওঠে। বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস আর জল কামান ছোড়ে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, মুখোশ পরে আন্দোলন চালানো বেআইনি। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ মুখোশ পরে পথে নেমেছিলেন। তাই গ্রেফতার করতে হয়েছে তাদের। গত তিনদিনে দুশোর বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, কার্ফু জারি না করলে হংকংকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরানো অসম্ভব হয়ে পড়বে। জায়গায় জায়গায় আগুন ধরিয়ে দিচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি।
বিক্ষোভকারী ২৪ বছরের জুলি বলেছেন, ‘এই পুলিশ কোনও কাজেরই নয়। প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে গিয়ে অতিরিক্ত কঠোর ভূমিকা নিচ্ছে তারা। নির্বিচারে মারধর করছে। স্কুল পড়ুয়াদেরও ছাড়ছে না।’ শান্তিপূর্ণভাবেই নিজেদের দাবি জানাচ্ছিল বিক্ষোভকারীরা, উল্টে পুলিশই অন্যায়ভাবে হামলা চালায়, জানিয়েছেন বছর আঠাশের ডেসমন্ড ফং। বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে রবিবার থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে মেট্রো পরিষেবা। বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রেন সহ গণপরিবহন। ব্যাহত হয়েছে বিমান পরিষেবা।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছে হংকংয়ে। ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন থেকে চীনের কাছে হংকংয়ের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরে এত বড় ও জোরালো প্রতিবাদ দেখা যায়নি। বহু বছর ব্রিটেনের উপনিবেশ ছিল হংকং। ২২ বছর আগে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় চীনের কাছে। তার পর থেকে স্বশাসিত এই অঞ্চলের মূল কর্তৃত্ব বেজিংয়ের হাতে। মাসখানেক আগে চীনের অনুগত ক্যারি ল্যাম প্রত্যর্পণ বিল আনার প্রস্তাব দেন পার্লামেন্টে। যা আইন হলে বিচারের প্রয়োজনে কোনও অপরাধীকে হংকং থেকে চীনে প্রত্যর্পণ করতে আর বাধা থাকবে না। এর পরেই ল্যামের ইস্তফা চেয়ে রাস্তায় নামেন মানুষজন। প্রবল প্রতিবাদে সেই বিল আনা স্থগিত রাখেন ল্যাম। তাতেও বিক্ষোভ থামেনি। সূত্র : দ্য ওয়াল।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক