চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মনে করেন তারা এখন কার্যত ‘একটি দৈত্যের সঙ্গে লড়াই করছেন’। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় দেশের অবস্থা এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
মারণ ভাইরাসের আক্রমণে মৃতের সংখ্যা আগেই ১৩০ ছাড়িয়েছে। উহান শহর এখনও গৃহবন্দি। এই পরিস্থিতিতে আজ বেজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস অ্যাডহ্যানোম গ্যাব্রিয়েসাস।
চীনা সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, টেড্রোসকে আশ্বস্ত করে জিনপিং বলেছেন, এই ভাইরাস নিয়ে যা যা রিপোর্ট তারা পাচ্ছেন, তা সবই প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর কাছ থেকে কোনও তথ্য লুকনো হচ্ছে না।
জিনপিং বলেছেন, এই ভাইরাস আসলে দৈত্যাকার। চীনের মানুষ লড়াই করছেন। বিশ্বের থেকে এই দৈত্যকে লুকনোর ক্ষমতা নেই আমাদের। ২০০২ সালে সার্সের সংক্রমণের সময়ে চীন সরকার যে গোপনীয়তা নিয়েছিল, এবারের ছবিটা তার থেকে আলাদা বলে স্বীকার করছেন অনেকেই।
এরই মধ্যে নিজেদের দেশের নাগরিকদের বিমানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বেশ কয়েকটি দেশ। আজ উহানের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে ২০৬ জন জাপানিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে সে দেশের সরকার।
চীনে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, সুইৎজারল্যান্ডের বিমান সংস্থা। মার্কিন নাগরিকদের উদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছে আমেরিকাও। তাদের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, রোগ মোকাবিলায় চীনকে তারা একাধিক বার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির কাজও তারা শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। আজ থেকে চীনের সব চেয়ে বেশি সংক্রমিত হুবেই প্রদেশে সবকটি আউটলেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি মার্কিন ফাস্ট ফুড চেন।
পাকিস্তান জানিয়েছে, উহানে অধ্যায়নরত চার ছাত্রের দেহে ভাইরাসটির নমুনা মিলেছে। ওই চারজন চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছেন।
তবে এর মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে জার্মানি এবং জাপানের দু’টি ঘটনায়। এতো দিন পর্যন্ত চীন থেকে অন্য কোনও দেশে কেউ গেলে তার থেকে সেই ভাইরাস সে দেশে ছড়াচ্ছিল। এবার মানুষের সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগের ফলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কথা জানা গেছে। জাপানে ষাট বছরের এক বৃদ্ধের শরীরে ওই ভাইরাস পাওয়া গেছে। তিনি নিজে চীনে যাননি। কিন্তু উহান থেকে ফেরা কয়েকজন পর্যটক তার ট্যাক্সিতে চড়েছিলেন সম্প্রতি। সেখান থেকেই ছড়ায় সংক্রমণ। জার্মানিতেও এক ব্যক্তি আক্রান্ত। তার সহকর্মী সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছেন। তার সঙ্গে কয়েক দিন কাজ করার পরেই অসুস্থ হন ওই ব্যক্তি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত গতিতে ছড়ানো আটকাতে এবার বেশ কয়েকটি উড়ান সংস্থা কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনগামী বিমানে যাত্রীদের কম্বল বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য বেশ কিছু জিনিস দেয়া আপাতত বন্ধ রাখছে তারা।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত