শহীদ হাসিবুর রহমান (১৭) মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কানাইপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী দেলোয়ার ঢালীর ছেলে। তার মা আলমাছ বেগম মারা গেছেন ১০-১২ বছর আগে। অভাব অনাটনেই বড় হয়েছে হাসিব। প্রতিবন্ধী পিতা আর নিজের ভরনপোষণের জন্য রং মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন ঢাকার সাভারে। তবে হাসিনা সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে গড়ে উঠা আন্দোলনে যোগ তিনি। আন্দোলনচলাকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাভারের গুলিবিদ্ধ হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে ভর্তি করেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট মারা যান হাসিব। পরে তাকে দাফন করা হয় পৈত্রিক ভিটা মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কানাইপুর গ্রামে। তার সরকারি গেজেট নং ৭৭৭। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ হাসিব গেজেটভুক্ত হলেও সরকারের অনেক সহায়তাই পাননি। ৬ জুলাই দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে শহীদ হাসিবের পরিবার এই অভিযোগ তোলা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শহীদ হাসিবের বড় চাচা তোতা মিয়া ঢালী। তিনি জানান, শহীদ হাসিবের বাবা দেলোয়ার হোসেন ঢালী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত একজন শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তার দেখভাল করেন হাসিবের বৃদ্ধ দাদি, যিনি নিজেও শারীরিকভাবে অক্ষম। পরিবারটি বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তোতা মিয়া ঢালী বলেন, শহীদ হাসিব গেজেটভুক্ত হলেও আমরা অধিকাংশ সরকারি সাহায্য পাইনি। আমাদের পরিবারকে উপেক্ষা করা হচ্ছে, যদিও হাসিব দেশের ছাত্রদের ন্যায্য অধিকারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। তিনি আরও বলেন, ভাতার জন্য বিভিন্ন স্থানে আমরা ঘুরেছি। শীঘ্রই হয়ে যাবে এমন আশ্বাস পেলেও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথম দু’দিন সুস্থভাবে বাড়ি ফিরে এলেও তৃতীয় দিন আর ফেরা হয়নি হাসিবুর রহমানের। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পরপারে পাড়ি জমান তিনি। শিশুকাল থেকেই হতভাগা ছিল হাসিবুর রহমান। মা মোছাম্মৎ আলমাছ মারা গেছেন হাসিবুরের ৫ বছরের সময়। এরপর বাবা দেলোয়ার হোসেন (৪০) স্ট্রোক করে। এক সময় সুস্থ্য স্বাভাবিক থাকলেও হাসিবের শিশুকালেই প্যারালাইস আক্রান্ত হয়ে চলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন বাবা দেলোয়ার হোসেন। হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন। সেই ছোট্ট সময় থেকেই দাদীর কাছেই মানুষ হতে থাকেন হাসিবুর রহমান। হাসিবুরের দাদা মৃত আমিন উদ্দিন ও দাদী সিরাতুন নেছা (৭৫)। নানার নাম ছত্তর গাজী (৭০)।
নাতি হাসিবুরের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ছোট বেলা থেকে আদর দিয়ে মানুষ করা দাদী সিরাতুন নেছা। তিনি বলেন, আমার নাতি হাসিবকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছিল। ওর বাবা শারিরীক ভাবে অক্ষম। আমি তাকে মুখে তুলে খাওয়াই। পায়খানা প্রস্রাব পরিস্কার করি। কিন্তু আমার নিজেরই বয়সের কারনে চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তবু করি। এই অবস্থায় রেখে আমার নাতিটা মারা গেলো। শহীদ পরিবারের সবাই অনেক ভাতা পেলেও আমার ছেলে দেলোয়ার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। শহীদ হাসিবুর রহমানের চাচা আতাউর ঢালী বলেন, ওর বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী। আমরা সবাই ওকে আদর করতাম। তিনি হাসিবুর হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এই বিষয় মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, হাসিবের পরিবারের প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা ও ভাতা প্রাপ্তির জন্য তিনি উদ্যোগ নিবেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ২ লাখ টাকা এবং আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে ১ লাখ টাকা আর্থিক সহায়াতা পেয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ