উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী কেসাং শহরকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির নেতা কিম জং উন। এক ব্যক্তির শরীরে কোভিড-১৯-এর লক্ষণ থাকায় এমনই নির্দেশ। জানা গেছে, করোনার সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি অবৈধভাবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেছেন বলে দাবি করছে পিয়ংইয়ং প্রশাসন।
গত শনিবার এ নিয়ে জরুরি বৈঠকের পর কিম জং উন লকডাউনের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তবে তার আগে শুক্রবার থেকেই শহরটির সীমান্তে সতর্কতামূলক লকডাউনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পিয়ংইয়ং প্রশাসন এখন তাদের দেশে করোনার বিস্তারের জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকে দোষারোপ করছে। উত্তর কোরিয়ায় কোনো করোনা রোগী নেই বলে এতদিন ধরে দাবি করে আসছে পিয়ংইয়ং।
যদিও এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন অন্য দেশের বিশেষজ্ঞরা। ওই ব্যক্তিকে আক্রান্ত হিসেবে ঘোষণা করা হলে উত্তর কোরিয়ায় তিনিই হবেন সরকারিভাবে করোনায় প্রথম শনাক্ত রোগী। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ কিম জং উনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘দুশ্চরিত্রের’ ভাইরাসটি দেশটিতে প্রবেশ করেছে এমন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়েছে।
করোনার সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি তিন বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমান। ১৭ জুলাই তিনি দেশটির সীমান্তে কড়া পাহারার মধ্যেও উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। ‘কয়েক দফা মেডিকেল চেকআপ এ অনিশ্চিত ফলাফল পাওয়ার পর’ তাকে প্রাথমিকভাবে কেসাং শহরে কড়া কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত পাঁচ দিনে তার সংস্পর্শে যারা এসেছে বা যারা শহরে ছিল তাদের সবাইকে পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়।
গতকাল সোমবার সিউলের এক কর্মকর্তা জানান, যে ব্যক্তি উত্তর কোরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, দক্ষিণে থাকাকালে তার কোনো সংক্রমণ হয়নি এবং আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শেও আসেননি। দক্ষিণ কোরীয় প্রশাসন করোনার সংক্রমণের পর থেকে সারা দেশে প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষের করোনা পরীক্ষা করিয়েছে। ট্রেস, টেস্ট ও ট্রিট পদ্ধতিতে করা এ পরীক্ষার ফলে দেশটি খুব দ্রুত করোনার বিস্তার বন্ধ করতেও সক্ষম হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ দুয়েন কিমের মতে, সিউলকে করোনাভাইরাসের জন্য দোষারোপ করে পিয়ংইয়ং এখন দক্ষিণ কোরিয়ার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা দাবি করতে পারে। কারণ উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়াকে শত্রুরাষ্ট্র মনে করে। এদিকে দুই কোরিয়ার মধ্যকার ঝামেলার মধ্যে প্রবেশ করেছে চীন। পেইচিং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পিয়ংইয়ংকে অর্থ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সখ্যের কারণে আগাগোড়াই উত্তর কোরিয়াকে সমর্থন দিয়ে আসছে চীন।
এমন অবস্থায় চীনের সমর্থন আশ্বাস মানে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি উত্তর কোরিয়ার অভিযোগের ভিত্তি পাওয়া। বিশ্ব রাজনীতির স্বার্থেও চীন উত্তর কোরিয়াকে পাশে পেতে চায়। দুই দেশের কূটনৈতিক হৃদ্যতা আন্তর্জাতিক মানচিত্রে চীন ও উত্তর কোরিয়ার আপাত ঘনিষ্ঠতার একটা চিত্র তুলে ধরে। উত্তর কোরিয়া আমেরিকান সাহায্যের প্রকাশ্য প্রস্তাবে সেভাবে সাড়া দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনা থমকে গেছে। এ পটভূমিতে উত্তর কোরিয়া যদি চীনের সাহায্য গ্রহণ করতে রাজি হয়, তাহলে চীন বিশ্বকে দেখাতে পারবে দুঃসময়ে উত্তর কোরিয়ার ‘প্রকৃত বন্ধু’ একমাত্র চীন।
বিডি-প্রতিদিন/শফিক