আগামী ১৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বর্তমান রিপাবলিকান দলীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
বিবিসি বাংলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ইতিহাসে দেখা গেছে কিছু অঙ্গরাজ্যের অনেক ভোটারই কোনও একটি দলের কট্টর সমর্থক নন। প্রার্থীদের নীতিমালা এবং আগামী চার বছরের জন্য প্রার্থীদের পরিকল্পনার বিচারে তারা শেষ মুহূর্তে ভোট দেন।
তারা প্রচার-প্রচারণার নিরিখে কাকে ভোট দেবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ফলে এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই চূড়ান্ত ফলকে যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে ঠেলে দিতে পারে।
এই ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেটগুলোতে (নির্বাচনী রণক্ষেত্র)’ ভোট কোন দুর্গে যাবে তা যেহেতু বোঝা কঠিন, তাই এই অঙ্গরাজ্যগুলোকে সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্যও বলা হয়।
নির্বাচনী সময়সূচির মধ্যে যেকোনও সময়ে এই ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্রে ভোটের অংক বদলে যেতে পারে।
ফাইভ থার্টি এইট নামে আমেরিকার একটি নির্বাচন বিষয়ক ওয়েবসাইট, যারা জনমত জরিপ বিশ্লেষণ করে, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিছু অঙ্গরাজ্যকে গত কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘বরাবরই’ সুইং স্টেট হিসেবে আবির্ভূত হতে দেখা গেছে।
গত কয়েকটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে অঙ্গরাজ্যগুলোর ‘দোদুল্যমান’ ভোট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর জয়-পরাজয় নিশ্চিত করেছে সেগুলোর মধ্যে ছিল কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহিও, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন।
ওয়েবসাইটটি ২০০৪ থেকে ২০১৬ গত চারটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জুন পর্যন্ত জনমত জরিপের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে বলছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে অ্যারিজোনা, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা আর উইসকনসিন গুরুত্বপূর্ণ সুইং স্টেট হয়ে উঠতে পারে।
কোনো কোনো বিশ্লেষক ২০২০ সালের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ দোদুল্যমান স্টেটের তালিকায় রাখছেন অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যকে।
কোনো কোনো নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের মতে ২০২০এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, উইসকনসিন এবং অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যগুলো নির্ধারক সুইং স্টেট হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কারণ এই অঙ্গরাজ্যগুলো থেকেই ২০১৬ সালের নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজের ভোটে অল্প ব্যবধানে হিলারি ক্লিনটনের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফলে ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের জন্য এই রাজ্যগুলোর ইলেকটোরাল কলেজ ভোট ধরে রাখা খুবই জরুরি হবে।
তবে জনমত জরিপ যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জয়-নির্ধারক অঙ্গরাজ্যগুলোতে প্রতিযোগিতার দৌড়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। তবে এই পরিস্থিতি যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে।
বর্তমান জরিপের ফলাফল জো বাইডেনের পক্ষে হলেও নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। আর অতীত রেকর্ড থেকে দেখা গেছে নির্বাচনী রণক্ষেত্রে জনমত জরিপ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোনো সময় যেকোনও দিকে যেতে পারে।
গত ১৩ আগস্ট পর্যন্ত বিবিসি সংকলিত জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জো বাইডেন মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং উইসকনসিন রাজ্যে এগিয়ে আছেন।
এসব রাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ১ শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন।
এখনকার জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প যেসব রাজ্যে এগিয়ে আছেন সেগুলো হচ্ছে - জর্জিয়া, আইওয়া এবং টেক্সাস। কিন্তু এখানেও ব্যবধান খুব সামান্য। গত নির্বাচনেও এসব রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ভোটের ব্যবধান ছিল আরও অনেক বেশি।
জো বাইডেন অন্য যেসব রাজ্যে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন, সেগুলো হলো- অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলাইনা, ওহাইও, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইসকনসিন।
জো বাইডেনের জন্য ভালো খবর হচ্ছে- এসব রাজ্যে তিনি বড় রকমের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্যের অধিকাংশগুলোতেই ব্যাপক ভোটে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এসব রাজ্যে এখন এগিয়ে গেছেন জো বাইডেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এখন এটাই দুশ্চিন্তার কারণ। তবে প্রচার-প্রচারণা এখনও অনেক বাকি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিডি প্রতিদিন/কালাম