ছত্রাক সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষের জ্ঞান বেশ সীমিত। কারণ, বেশিরভাগ ছত্রাকই চোখে দেখা যায় না। এক ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী ছত্রাকের বিস্ময়কর জগতের রহস্য উন্মোচন করে অনেক নতুন তথ্য তুলে ধরেছেন।
মার্লিন শেলড্রেক মাশরুমের খোঁজে বের হন। সেটা তার কাজের অংশ। লন্ডনের এই জীববিজ্ঞানী মাইকোলজি অর্থাৎ মাশরুম সংক্রান্ত বিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ। কারণ, খালি চোখে যা দেখা যায়, সে তুলনায় অনেক বেশি ছত্রাক চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। এমনই একটি নমুনা তুলে ধরে শেলড্রেক বলেন, ‘এটিকে টিন্ডার ফাংগাস বা হর্স-শু ফাংগাস বলা হয়। এই ছত্রাকের অসাধারণ ইতিহাস রয়েছে। মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে নানাভাবে এটি ব্যবহার করছে।’
এই মাশরুম ঔষধি হিসেবেও কাজে লাগানো হয়। যেমন এই মাশরুম ইমিউন সিস্টেম আরও শক্তিশালী করে মৌমাছির ঝাঁকের মৃত্যু এড়াতে সহায়তা করতে পারে।
মার্লিন শেলড্রেক মনে করেন, ‘আসলে প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো ছত্রাক জগতের বৈচিত্র্যও কম নয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে বেশিরভাগ ছত্রাক কিন্তু মাশরুম উৎপাদন করে না। কিছু ছত্রাক প্রলম্বিত হয়ে যে মাশরুম সৃষ্টি করে, সেটা আসলে ফলের মতো।’
সত্যি ছত্রাক সব জায়গায় পাওয়া যায় – মাটিতে, আকাশে, এমনকি আমাদের শরীরের মধ্যেও। ছত্রাক ছাড়া অনেক জীবের অস্তিত্বই থাকত না। সত্যি বলতে কি ছত্রাক ছাড়া এই গ্রহে প্রাণের অস্তিত্বই সম্ভব হত না। কিন্তু ছত্রাক কীভাবে বাঁচে?
শেলড্রেক জানালেন, ‘বেশিরভাগ ছত্রাক মাইসিলিয়াম হিসেবে জীবনের বেশি অংশ কাটায়। চোঙার মতো কোষের শাখাপ্রশাখার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ছত্রাক খোরাক সংগ্রহ করে।’
একমাত্র মাইক্রোস্কোপ দিয়েই বেশিরভাগ মাইসিলিয়াম দেখা যায়। এই ছত্রাক ধুলিকণার ওপর গজায়। আবার বিশাল আকারও ধারণ করতে পারে। অ্যামেরিকার ওরিগন রাজ্যে দুই হাজার বছরের বেশি পুরানো মাইসিল নেটওয়ার্ক প্রায় নয় বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম বিশাল জীব হিসেবে সেটি পরিচিত।
তেমন চর্চার বিষয় না হলেও ছত্রাক বিস্ময়কর এক জীব। ‘ছত্রাক নিয়ে লেখা নিজের বইয়ে মার্লিন শেলড্রেক এই জীবকে পৃথিবীর গোপন শাসক বা নিয়ন্ত্রক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
কারণ ব্যাখ্যা করে মার্লিন শেলড্রেক বলেন, ‘আমি শুধু মাশরুম এবং ছত্রাক থেকে মাশরুম সৃষ্টি নিয়ে কথা বলতে চাইনি। যে ছত্রাক মাশরুম সৃষ্টি করে না, এমন জীব সহজে চোখে পড়ে না, অথচ সেটি জীবনের বিবর্তনের চাবিকাঠি। ছত্রাকের নেটওয়ার্ক নিয়ে আমি অনেক ভাবনাচিন্তা করেছি। আমরা সরাসরি সচেতন না হলেও ছত্রাক আমাদের চারপাশের জগতের অনেকটাজুড়েই রয়েছে।’
ছত্রাক যে সত্যি সব জায়গায় গজিয়ে উঠতে পারে, মার্লিন শেলড্রেক এক পরীক্ষার মাধ্যমে তা প্রমাণ করছেন। তিনি মাইসিলিয়ামের প্রলেপ দেওয়া একটি বইয়ের ওপর অয়েস্টার মাশরুম বেড়ে উঠতে দিয়েছেন। ইলেকট্রনের মাধ্যমে তিনি সেই মাশরুম গজানোর শব্দও ধারণ করেছেন। তার ভাই সেই শব্দের ভিত্তিতে ‘এন্ট্যাংগলড লাইফ’ নামের গান সৃষ্টি করেছেন।
ছত্রাকের জটিল জগত আরও ভালোভাবে বুঝতে ও অন্যদের বোঝাতে মার্লিন শেলড্রেক নানা পদ্ধতি কাজে লাগান। তার মতে, সংগীত আসলে শিল্প ও বিজ্ঞানের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটায় এবং তার মাথায় নিত্যনতুন আইডিয়ার জন্ম দেয়।
শেলড্রেক বলেন, ‘ছত্রাকের জীবন কল্পনা করা সত্যি কঠিন। যে পরিবেশ তাদের সুযোগগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে, সেটি আমাদের তুলনায় একেবারে ভিন্ন। তাই নিজেকে ছত্রাকের জায়গায় কল্পনা করতে আমাকে নানা ধরনের রূপক ও ভাবনার আশ্রয় নিতে হয়েছে। অবশ্যই কখনো তা জানতে পারব না। কিন্তু সেই চেষ্টা করার সার্থকতা আছে বৈকি। শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও আত্মকেন্দ্রিকতা ছেড়ে নিজেদের অন্য জীবের জায়গায় কল্পনা করা উচিত।’
তার বই ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তার তালিকার শীর্ষে পৌঁছে গেছে এবং একাধিক পুরস্কার পেয়েছে। মার্লিন শেলড্রেক গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে ছত্রাকের বিস্ময়কর জগত উন্মোচন করছেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ