৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৫
শিকাগো কাউন্সিলের জরিপ

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতা চান ৪৭ শতাংশ আমেরিকান

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সমঝোতা চান ৪৭ শতাংশ আমেরিকান

ফাইল ছবি

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ১০ মাসে অবতীর্ণ হলো। তা বন্ধের কোনো নাম-নিশানা না থাকায় ৪৭ শতাংশ আমেরিকান এখন ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কিয়েভকে শিগগিরই একটি সমঝোতায় উপনীত হবার আহ্বান জানিয়েছে। ‘শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স’ পরিচালিত এক গবেষণা-জরিপে এমন অভিমত দিয়েছেন আমেরিকানরা। 

সোমবার ৫ ডিসেম্বর জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। বলা হয়েছে, ১০ মাস ধরেই রাশিয়ার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ইউক্রেন। বিধ্বস্ত জনপদ। কিন্তু শান্তির কোনো ঠিকানা নেই। এমন অবস্থায় প্রচন্ড শীত আসন্ন। তাই মানবিকতার স্বার্থে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ নিষ্পত্তিই হতে পারে উত্তম পন্থা। 

এই জরিপে অংশগ্রহণকারিদের ৪০ শতাংশ অবশ্য উল্লেখ করেছেন যে, ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বিদ্যমান সহায়তা অব্যাহত রাখা হউক। রাশিয়ার সাথে আলোচনাক্রমে যুদ্ধ বন্ধের পরামর্শ প্রদানকারিদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ হলেন ডেমক্র্যাট। রিপাবলিকানদের ২৯ শতাংশ বলেছেন যে, ক্রমান্বয়ে ইউক্রেন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রত্যাহারের ধারা অনুসরণ করা উচিত। রিপাবলিকান পার্টির সমর্থকদের ২৫ শতাংশ অবশ্য উল্লেখ করেছেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হতে যুক্তরাষ্ট্রসহ মিত্র শক্তিসমূহকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। 

এই জরিপে আরো উঠে এসেছে, দুই তৃতীয়াংশেরও অধিক আমেরিকান চাচ্ছেন ইউক্রেনকে আরো বেশী সমরাস্ত্র ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হউক। ৭৫ শতাংশ মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশী রিফ্যুজি নেওয়া দরকার ইউক্রেন থেকে। একইসাথে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধের মাত্রাও তীব্র করার পরামর্শ দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ আমেরিকান। 

উল্লেখ্য, সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরফলে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র খাতে বাইডেন প্রশাসনের মোট বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ বিলিয়ন ডলার। এ মাসে আরো ৫৩ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হবে ইউক্রেনে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরায় চালুর জন্যে। রাশিয়ার ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপের ফলে সে সব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

শিকাগো কাউন্সিলের এই জরিপে আরো জানা গেছে, ডেমক্র্যাটদের এক তৃতীয়াংশ মনে করছেন যুদ্ধের অজুহাত দাঁড় করিয়ে ইউক্রেন মার্কিন ফায়দা নিচ্ছে। এমন মনোভাব পোষণকারি রিপাবলিকানের হার হচ্ছে ২৩ শতাংশ। স্বতন্ত্র ২২ শতাংশ একই ভাবনায় রয়েছেন। অবশ্য উভয় দলের ৪৬ শতাংশ এর ধারণা, রাশিয়া অথবা ইউক্রেন-কেউই ফায়দা পাচ্ছে না। 

এই গবেষণা জরিপ পরিচালনাকারি টিমের অন্যতম সদস্য দিনা স্মেল্টজ উল্লেখ করেছেন, যারা ভাবছেন যে যুদ্ধে ইউক্রেন লাভবান হচ্ছে, তারাই যুদ্ধ চালিয়ে যাবার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে জি সেভেন গ্রুপের নেতারা ইউক্রেন প্রেসিডেন্টকে শান্তি প্রক্রিয়া অবলম্বনের পরামর্শ দেন। সে সময় রাশিয়াকে ইউক্রেন থেকে সব সৈন্য সরিয়ে নেয়ার শর্তও দেয়া হয় শান্তি প্রক্রিয়ার স্বার্থে। গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, পুতিন যদি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান চান তাহলে রাশিয়ার সাথে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। ‘তবে এখনও তেমন মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না’-উল্লেখ করেন বাইডেন। ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্টের সাথে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন এ কথা বলেছেন। 

সে সময় বাইডেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন। গত শুক্রবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেদ প্রাইস বলেছেন, জবর-দখলকৃত এলাকা ছাড়তে হবে রাশিয়াকে, তারপরই শুরু হতে পারে সমঝোতার আলোচনা। অপরদিকে গতমাসে পেন্টাগণের জয়েন্ট চীফ অব স্টাফ জেনারেল মার্ক এ মিলী সাংবাদিকদের কাছে উল্লেখ করেছেন, সময় আসছে ইউক্রেনকে সমঝোতায় এগিয়ে যেতে। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর