গৌতম আদানির কেবল ভারত নয় বিশ্বদরবারেও বেশ নাম ডাক। সমালোচনার পাশাপাশি তার প্রশংসাও ঢের। কারণ তিনি বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া সেই একজন, যিনি পতন ঠেকিয়ে হয়েছেন এশিয়ার শীর্ষ ধনী।
তবে আদানির সাফল্য গাঁথায় বড় আঘাত হেনেছে একটি রিপোর্ট। যে রিপোর্টে আদানির বিরুদ্ধে আনা হয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিশেষ করে তার ব্যবসায়িক কৌশল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনের পর। ধস নেমেছে আদানি গ্রুপের শেয়ারে। চারিদিকে টালমাটাল দশা।
সেই সাথে তার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারও পড়েছে বড় চ্যালেঞ্জে মুখে। মাত্র এক সপ্তাহেই আদানি গ্রুপের সম্পদের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি ডলার কমেছে।
ফোর্বসের ধনীর তালিকাতেও বেশ অবনমন হয়েছে আদানির। এক লাফে সম্পদ খুইয়ে তিনি ৩ থেকে নেমে গেছেন ৭ নম্বরে।
মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে আদানির ব্যবসার নানা জালিয়াতি ও প্রতারণামূলক দিক তুলে ধরেছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আদানির আঙুল ফুলে মাত্র তিন বছরে হয়েছে কলাগাছ। আর সেই পথে শেয়ার বাজারকে হাতিয়ার বানিয়েছেন আদানি। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে নিজের সম্পদ বাড়িয়েছেন তিনি।
সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর, বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, খনি, ভোজ্যতেল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেন আদানি। গণমাধ্যম ও সিমেন্ট খাতেও তার বিনিয়োগ আছে।
ফোর্বসের তালিকায় বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি হয়ে যাওয়া আদানির মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১২৭ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারে। বাংলাদেশি টাকায় যা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
৬০ বছর বয়সী আদানি খুব একটা পরিচিত ছিলে না কয়েক বছর আগেও। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনে সেই বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তারা জানিয়েছে, আদানি গ্রুপ এর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছে। গৌতম আদানির ১৩ হাজার কোটি ডলার সম্পদের ১০ হাজার কোটি ডলারই অর্জিত হয়েছে গত ৩ বছরে স্টক জালিয়াতির মাধ্যমে। এই ৩ বছরে তার গড়ে তার সম্পদ বেড়েছে ৮১৯ শতাংশ।
আদানির বিরুদ্ধে আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে ব্যবসায়িক ফায়দা লোটার অভিযোগ। আদানি নিজেও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা স্বীকার করেছেন।
আদানি গ্রুপের প্রচার প্রসারে গণমাধ্যমগুলোকেও কব্জাগত করছেন আদানি-সেই অভিযোগও পুরনো। ভারতের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম এনডিটিভির বড় অংশের শেয়ারও এখন তার দখলে।
আদানির ব্যবসা বিস্তারের কর্মকাণ্ড বরাবরই বিতর্কিত। কেরালায় তার ৯০ কোাটি ডলারের বন্দর নির্মাণের বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীরা বিক্ষোভ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায় তার কারমাইকেল কয়লা খনির বিরুদ্ধে পরিবেশবাদীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিবাদ করছেন।
সবমিলিয়ে শীর্ষে থাকা আদানির সামনে এখন চূড়া নয় টাল সামলে টিকে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই এখন তার ব্যবসায়িক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। ব্যবসার নামে এমন নয়-ছয়কে অনেকেই দেখছেন ভারতের উন্নয়নের পথের অশনি সঙ্কেত হিসেবে। আদানির রাজনীতিকে ব্যবসার হাতিয়ার বানানোর ঘটনাও রীতিমতো হতভম্ব করে দিচ্ছে অনেককে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, ফোর্বস
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল