রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে ট্যাংকের প্রতিশ্রুতির পর ইউক্রেন পশ্চিমা বিশ্বের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র, বোমারু বিমানের মতো সরঞ্জামও চাইছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস সে ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তে সমন্বিত সিদ্ধান্তের পক্ষে সাড়া দিয়েছেন।
রাশিয়ার লাগাতার হামলার মোকাবিলা করতে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আরও অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের ডাক দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি।
দৈনিক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, পূর্বের দনিয়েৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। তার মতে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে ক্লান্ত করে তুলতে রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। তাই সময়কেই হাতিয়ার করে তুলতে হবে। ইউক্রেনের জন্য আরও দ্রুত নতুন অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমেই সেটা করা সম্ভব বলে জেলেনস্কি মনে করেন।
রোববার খেরসন শহরের উপর রাশিয়ার হামলায় ছয় জন আহত হয়েছে বলে ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। হামলায় একটি হাসপাতাল ও স্কুলের ক্ষতি হয়েছে। সে দিনই খারকিভ শহরে এক বহুতল আবাসনও রুশ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে।
রাশিয়াও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ করেছে। ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকার উপর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছে বলে মস্কো দাবি করেছে। ইউক্রেন অবশ্য সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সে দেশের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা রোববার শুধু রুশ বাহিনীর তৎপরতার খতিয়ান দিয়েছেন।
অনেক তর্কবিতর্কের পর আমেরিকা ও জার্মানি গত সপ্তাহে ইউক্রেনের জন্য ব্যাটেল ট্যাংক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে অন্যান্য দেশও এমন দৃষ্টান্ত অনুসরণের সুযোগ পেয়েছে। ফ্রান্সে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতের সূত্র অনুযায়ী তার দেশ মোট ৩২১টি ট্যাংকের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে। তবে ট্যাংক চালানোর প্রশিক্ষণ পেয়ে সেগুলি হাতে পেতে কিছু সময় লাগছে। বসন্তকালে রাশিয়া ও ইউক্রেন বড় আকারের সামরিক অভিযান শুরু করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তার আগেই অস্ত্রভাণ্ডার যতটা সম্ভব বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন।
ট্যাংকের প্রতিশ্রুতির পর দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও ভারি ও উন্নত সামরিক সরঞ্জামের প্রত্যাশা করছে ইউক্রেন। সে বিষয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ইউক্রেন এফ-১৬ বোমারু বিমানও চাইছে বলে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির এক উপদেষ্টা জানিয়েছেন।
দক্ষিণ আমেরিকা সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আপাতত ইউক্রেনের জন্য বোমারু বিমান পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তার মতে, বর্তমানে এমন বিতর্ক অত্যন্ত অদ্ভুত। চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে শলৎস বলেন, ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রের প্রশ্নে সিরিয়াস বিতর্কের প্রয়োজন। ইউক্রেনের বন্ধুদের মধ্যে নিলামের মতো প্রতিযোগিতা একেবারেই কাম্য নয়। সে ক্ষেত্রে সম্ভবত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণ ইউক্রেনের জন্য সহায়তার তুলনায় বেশি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন জার্মান চ্যান্সেলর।
ইউক্রেনের জন্য সহায়তার সীমা সম্পর্কে মনে করিয়ে দেন ওলাফ শলৎস। গত বছরের শুরুতে রাশিয়ার হামলার পর ইউক্রেনের আকাশে ‘নো ফ্লাই জোন' কার্যকর করার দাবি নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তিনি। কারণ সে ক্ষেত্রে ন্যাটো সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তো। সৈন্য পাঠানোর মতো ‘অর্থহীন' প্রস্তাবও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, শলৎস বার বার ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে ন্যাটোকে বাইরে রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত