করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বিশ্বকে একরকম খাদ্য সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেই সংকটের মধ্যে শুরু হয়েছে আরেক বিপদ। বিশ্বজুড়েই পিঁয়াজ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিশ্ব পিঁয়াজ সঙ্কটের একটি চিত্র। কেবল পিঁয়াজ নয় অনান্য সবজির দামও বাড়ছে সমানতালে পাল্লা দিয়ে।
ফিলিপাইনের বাসিন্দা লালাইন বাসা আগে এক কেজি পিঁয়াজ কিনতে প্রতিদিন। বানাতেন স্প্রিং রোল। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আধা কেজি পিঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তিনি। আর মরক্কোর রাজধানী রাবাতে বসবাস করা ফাতিমা বর্তমানে পিঁয়াজ ও টমেটো কিনতেই পারছেন না। কারণ, দাম তার সাধ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তিন সন্তানের জননী ফাতিমা রেগে বললেন, ‘বাজারে আগুন লেগেছে।’
দুই নারীর ভৌগোলিক অবস্থান ১২ হাজার কিলোমিটার দূরে। তবুও তাদের সঙ্কট সেই একই। সবকিছুর এমন চড়া দামের কারণে অপুষ্টিজনিত সংকটে পড়তে পারে বিশ্ব শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে গম ও শস্যের দাম কিছুটা কমেছে। তবে অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে বিশ্ব সবজি বাজার। ফলে স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চতায় বিষয়টিও পড়েছে ঝুঁকিতে।
অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকায় অনেক দেশই অভ্যন্তরীণ বাজার সামলাতে রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সিন্ডি হলেম্যান বলেছেন, ‘কেবল প্রয়োজনমাফিক ক্যালরি খাওয়া যথেষ্ট নয়, খাবারের গুণমানও পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তার যোগসূত্র রয়েছে। খাবারের মান ভালো না হলে তা বিভিন্ন ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।’
পিঁয়াজ বিশ্বের একটি মূল খাবার হিসেবে বিবেচিত। টমেটোর এটিই সবচেয়ে বেশি খাওয়া সবজি। প্রতি বছর প্রায় ১০৬ মিলিয়ন টন পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়।
পিঁয়াজের এই দাম বেড়ে যাওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। যেমন, পাকিস্তানের বন্যা, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়ায় মধ্য এশিয়ায় স্টোর করে রাখা পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এদিকে উত্তর আফ্রিকার কৃষকরা খরার পাশাপাশি বীজ আর সারের দাম বেড়ে যাওয়ার সাথেও যুদ্ধ করছেন পেঁয়াজ উৎপাদন করতে।
বাজে আবহাওয়াও মরক্কোর কৃষকদেরকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মরক্কোর সরকার পশ্চিম আফ্রিকায় টমেটো আর পিঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে দেশটির রাজধানীর বাজারে আগে থেকেই পিঁয়াজের দাম অনেক বেশি। ৫১ বছর বয়সী অবসর নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা ফাতিমা জানান, তার আয়ে পুরো মাসের খাবার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। রমজান মাসে এর প্রভাব আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাবাতের ওশান মার্কেটে ৩০ বছর ধরে সবজি বিক্রি করা ব্রাহিম জানান, ‘১০ থেকে ২০ বছর ধরে আমার কাছ থেকে সবজি কেনা ব্যক্তিরা এখন এক পিস টমেটো, একটা পিঁয়াজ কিংবা একটা আলু কিনছেন। লোকজনের হাতের পয়সা ফুরিয়ে আসছে।’
ফিলিপাইনেও একই অবস্থা। দেশটিতে মাংসের চেয়েও পিঁয়াজের দামি বেশি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে লুকিয়ে পিঁয়াজ আনতে গিয়ে ধরাও পড়েছেন বেশ কয়েকজন বিমানকর্মী। ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির পরও ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের সরকার পিঁয়াজ আমদানির দিকে জোর দিয়েছেন।
সূত্র: ব্লুমবার্গ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল