৭ মে, ২০২৩ ১৩:২১

ভারতে সংস্কৃত বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তাক লাগালেন ইরফান

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

ভারতে সংস্কৃত বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তাক লাগালেন ইরফান

মোহাম্মদ ইরফান

ভারতের উত্তরপ্রদেশের ‘মাধ্যমিক সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ বোর্ড’ এর অধীন ‘উত্তর মধ্যমা-২’ (দ্বাদশ শ্রেণি) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক মুসলিম শিক্ষার্থী। ১৩ হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম হয়েছেন ১৭ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইরফান।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত সংস্কৃত বোর্ডের ‘উত্তর মধ্যমা-২’ (দ্বাদশ শ্রেণি) এবং ‘পূর্ব মধ্যমা-২’ (দশম শ্রেণি) এর পরীক্ষা হয়। বুধবার লখনওয়ে অবস্থিত শিক্ষা পরিষদের কার্যালয় থেকে এই ফল ঘোষণা হয়। তাতে দেখা গেছে ‘উত্তর মধ্যমা-২’ পরীক্ষায় ৮২.৭১ শতাংশ নাম্বার পেয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন ইরফান। 

অন্যদিকে ‘পূর্ব মধ্যমা-২’ (দশম শ্রেণি) পরীক্ষায় ৯২.৫% পেয়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেছেন বালিয়ার মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী স্কুলের শিক্ষার্থী আদিত্য সিং। 

পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বারানসি সংলগ্ন চান্দৌলি জেলার সাকালডিহা তহসিলের জিন্দাসপুর গ্রামের বাসিন্দা ইরফান। শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর তিনি পিছনে ফেলে দিয়েছেন বালিয়ার গঙ্গোত্রী দেবী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিব দয়াল গুপ্তা এবং প্রতাপগড়ের শ্রী রাম তহল বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিকাশ যাদবকে। শিব দয়ালের প্রাপ্ত নম্বর ৮০.৫৭ শতাংশ এবং বিকাশের প্রাপ্ত নম্বর ৮০.৩৫ শতাংশ।

চান্দৌলির সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত গভর্মেন্ট স্কুলের ছাত্র ইরফান একটি ধর্মপ্রাণ মুসলিম পরিবারের সন্তান। ছেলের এই সাফল্যে গর্বিত তার বাবা সালাউদ্দিন। ইরফান জানিয়ে দিয়েছেন বড় হয়ে তিনি সংস্কৃতের শিক্ষক হতে চান। 

৫১ বছর বয়সী স্নাতক সালাউদ্দিন বলেন, ‘সংস্কৃত বোর্ডের দশম শ্রেণির পরীক্ষাতেও খুব ভালো ফল করেছিল ইরফান। ইরফানই একমাত্র মুসলিম শিক্ষার্থী যে সংস্কৃত বোর্ডের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় প্রথম ২০ জনের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।’ 

পেশায় ক্ষেতমজুর সালাউদ্দিন আরো বলেন, ‘সংস্কৃত বোর্ডের পরীক্ষায় ১৩ হাজার ৭৩৮ জনকে পেছনে ফেলে ইরফান প্রথম হয়েছে। আমি খুশি যে ইরফান আমার পেশায় না এসে তার নিজের পথ বেছে নিয়েছে। খুব ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতের প্রতি তার একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল এবং ভবিষ্যতেও সে এটা নিয়েই পড়াশোনা করতে চায়। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। একজন মুসলিম শিক্ষার্থীর কাছে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনাটা করাটা একটু অন্যরকম যদিও আমি কোনোদিনই তাকে নিরুৎসাহিত করিনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই বিশ্বাস করি না যে, একজন মুসলিম শিক্ষার্থী সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে না কিংবা একজন হিন্দু শিক্ষার্থী আরবি বা উর্দুতে পারদর্শী হবে না। আমার ছেলে ইরফানের পছন্দের পড়ার বিষয় নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই।’ 

সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি কীভাবে ইরফানের মতো এক মুসলিম কিশোরের আগ্রহ জন্মালো তা নিয়ে বাবা সালাউদ্দিন বলেন, ছেলে যখন জুনিয়র ক্লাসে পড়তো তখন সেখানে সংস্কৃতটা বাধ্যতামূলক ছিল। দ্বাদশ শ্রেণিতেও সে সংস্কৃত বেছে নিয়েছিল। আমিও তাকে উৎসাহিত করেছিলাম।  

ইরফান এখন শাস্ত্রী (বিএড সমতুল্য) এবং আচার্য (স্নাতকোত্তর সমতুল্য) নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়। ভবিষ্যতে তার ইচ্ছা একজন সংস্কৃতের শিক্ষক হবে।  

সালাউদ্দিন এও জানান, তার পরিবার কোনোদিনই ইরফানকে পড়ার জন্য চাপাচাপি করেনি। সেও কোনোদিন আমাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সাহায্য চাইনি যেহেতু আমি বা আমার স্ত্রী কেউই সংস্কৃত জানতাম না। ও কেবল স্কুলে তার শিক্ষকদের কাছ থেকে সহায়তা নিত, আর বাড়িতে প্রতিদিন তিন থেকে চার ঘণ্টা পড়াশোনা করতো। 

প্রবল অর্থকষ্টের মধ্যে কীভাবে ছেলের পড়াশোনা চালিয়েছেন তাও বলেছেন সালাউদ্দিন। তিনি বলেন,‘আমি একজন ক্ষেতমজুর। দৈনিক ৩০০ রুপি মজুরি পাই। তাও আবার প্রতিদিন কাজ থাকে না। ফলে আর্থিক সমস্যার কারণে আমি ইরফানকে কোনো বেসরকারি বা অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। সেই কারণেই সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত গভর্নমেন্ট স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করাই। কারণ, আমার পক্ষে একমাত্র এই স্কুলের মাসিক বেতন বহন করাই সম্ভব ছিল।’ 

ইরফানের এই সাফল্যে খুশী তার স্কুলের প্রিন্সিপাল জয় শ্যাম ত্রিপাঠী। তিনি বলেন, ‘ইরফান বরাবরই একজন দায়িত্বশীল শিক্ষার্থীর ভূমিকা পালন করে এসেছে। আমাদের কলেজের জন্য সে এক বড় সম্মান নিয়ে এসেছে।’ 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর