মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানের অবনতি হওয়ায় অস্থিরতা দেখা গেছে বিশ্ব শেয়ারবাজারে।
গত মঙ্গলবার রেটিং সংস্থা ফিচ যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান ‘এএএ’ থেকে একধাপ কমিয়ে ‘এএ+’ নির্ধারণ করে। সরকারের বিপুল ঋণ ও আর্থিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ফিচ ঋণমান কমিয়েছে বলে জানায়। এতে গতকাল বুধবার বিশ্বের বড় বড় শেয়ারবাজারগুলোতে ব্যাপক দরপতন ঘটে।
গতকাল জাপানের বেঞ্চমার্ক নিক্কি ২২৫ সূচক বছরের সবচেয়ে খারাপ দিন অতিবাহিত করেছে। এ দিন নিক্কি ২২৫ সূচক পড়েছে ২.৩ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক দিনশেষে পড়েছে ২.৫ শতাংশ। ইউরোপীয় শেয়ারবাজার তুলনামূলক ভালো অবস্থায় থাকলেও বেঞ্চমার্ক স্টোক্স ৬০০ সূচক পড়ে ১.৪ শতাংশ।জার্মানির ড্যাক্স সূচক পড়ে ১.৪ শতাংশ, ফ্রান্সের ক্যাক ৪০ সূচকের দরপতন হয় ১.২ শতাংশ। লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচক ১.৫ শতাংশ পড়ে দুই সপ্তাহে সর্বনিম্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও বড় দরপতন দেখা যায়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের দর পড়ে ০.৮ শতাংশ ও নাসডাক সূচক পড়ে ১.২ শতাংশ।
এর পাশাপাশি ঋণমান কমানোর প্রভাবে বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতের ডলারের পতন হয়েছে।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক অবস্থা এবং ঋণের বোঝা নিয়ে উদ্বেগের কারণে ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে ফিচ। যদিও দুই মাস আগে দেশটির ঋণসীমা সংকটের সমাধান হওয়া সত্ত্বেও রেটিং কমানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে প্রথম ঋণমান কমানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল ফিচ। তারপর ঋণসীমা সংকট সমাধানের পর জুনে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানের শীর্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিল ফিচ এবং বলেছিল, তারা এই বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে পর্যালোচনায় চূড়ান্ত করতে চায়।
কয়েক মাস ধরে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার অবসান ঘটিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস একটি ঋণ চুক্তিতে পৌঁছায়। ওই চুক্তিতে সরকার ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলার ঋণসীমা তুলে নেওয়ার দুই মাস পর ফিচ এই উদ্যোগ নিয়েছে।
এক বিবৃতিতে ফিচ বলেছে, ‘ফিচের দৃষ্টিতে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ঋণের সীমা স্থগিত করতে জুনে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হলেও গত ২০ বছরে সরকারের আর্থিক ও ঋণসংক্রান্ত মানের ক্রমাগত অবনতি হয়েছে।’ মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন এক বিবৃতিতে ফিচের অবনমনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি এটিকে ‘স্বেচ্ছাচারী ও পুরনো তথ্যের ওপর ভিত্তি করে’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।
বিশ্বব্যাপী মুডি’স, এসঅ্যান্ডপি ও ফিচ—এই তিন মার্কিন কম্পানির নির্ধারিত ঋণমানের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। কোনো দেশকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা বোঝার জন্য বিনিয়োগকারীরা ক্রেডিট রেটিংকে একটি মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করেন। অর্থনীতির আকার এবং স্থিতিশীলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ‘অত্যন্ত নিরাপদ বিনিয়োগ’ হিসেবেই বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে মার্কিন সরকারের ঋণসীমা নিয়ে এ বছরও রাজনৈতিক টানাপড়েন দেখেছে বিশ্ব।
সূত্র : বিবিসি, সিএনএন বিজনেস
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ