ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ছিল বেল ২১২। কপ্টারটি বয়স সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে, এই মডেলটি কানাডার সামরিক বাহিনীর জন্য ১৯৬০ সালে তৈরি করা হয়েছিল।
মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে, ইরানে ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্যদের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে নিষেধাজ্ঞাগুলো চলমান। এতে করে ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর পর দেশটির উড়োজাহাজ শিল্পের দুর্বলতা আবার সামনে এসেছে। মূলত মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে ইরানের উড়োজাহাজ শিল্প বিকশিত হতে পারেনি। যার ফল বিভিন্ন সময়ে তাদের ভোগ করতে হয়েছে। যে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইব্রাহিম রাইসি ও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ান নিহত হয়েছেন, সেটিও ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বহু পুরনো কপ্টার।
জানা গেছে, মার্কিন কোম্পানি বেল হেলিকপ্টার ওই উড়োযানগুলো নির্মাণ করে। বিশ্বজুড়ে অনেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সেগুলো ব্যবহার করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং থাইল্যান্ড পুলিশের মতো বাহিনীগুলোতেও এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। ফ্লাইটগ্লোবালের ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার ফোর্সেস ডিরেক্টরি অনুযায়ী, ইরানের নৌ ও বিমান বাহিনীর কাছে মোট ১০টি বেল হেলিকপ্টার রয়েছে।
তবে, দেশটির সরকার কতটি পরিচালনা করে তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। যেকোনো উদ্দেশ্যেই এই এয়ারক্র্যাফটগুলোকে ব্যবহার করা যায়। মানুষ বা পণ্য পরিবহন তো বটেই অস্ত্র সজ্জিত করে যুদ্ধের জন্যও এগুলো উপযোগী। ইরানের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা জানায়, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী কপ্টারে ছয় জন যাত্রী এবং তিনজন ক্রু ছিলেন।
বেল হেলিকপ্টার সর্বশেষ সংস্করণ, সুবারু বেল ৪১২ যা পুলিশের ব্যবহার, চিকিৎসা পরিবহন, সৈন্য পরিবহন, শক্তি শিল্প এবং অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহার উপযোগী। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এভিয়েশন সেফটি এজেন্সির সার্টিফিকেশন অনুসারে, এটি ক্রুসহ ১৫ জনকে বহন করতে পারে।
উড়োজাহাজ চলাচলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে একটি বেসামরিক বেল ২১২ হেলিকপ্টার সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলে বিধ্বস্ত হয়। সংস্থাটির ডাটাবেস অনুসারে ২০১৮ সালে এই মডেলের আরও একটি ইরানি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে চারজন নিহত হয়েছিল।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে দেশটি এভিয়েশন খাত যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হয়ে আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে পশ্চিমাদের পারমাণবিক চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার পর এই অবস্থা আরও সঙ্কটাপন্ন হয়েছে। ইরানি বহরে থাকা যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমাদেশে তৈরি শত শত উড়োজাহাজ খুচরা যন্ত্রাংশের অভাবে গ্রাউন্ডেড হয়ে আছে।
সূত্র : রয়টার্স।
বিডি-প্রতিদিন/শআ