যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) ইসরায়েল ও হামাস নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন হয়েছে।
আবেদনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এবং হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার, সংগঠনটির সামরিক শাখা ইজ্জ–এল দিন–আল কাসাম ব্রিগেডের কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফ ও রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম খান।
জাতিসংঘে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা থাকায় ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে থাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ফিলিস্তিন রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী একটি পক্ষ। এই সংবিধির ভিত্তিতেই আইসিসি গঠিত হয়েছে।
দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই আইসিসি কৌঁসুলির পরোয়ানা জারির আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
এখন হামাস ও ইসরায়েলি নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি বিবেচনা করবেন আইসিসির বিচারপতিদের একটি প্যানেল। পরোয়ানা জারি হলে আদালতের রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো সুযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করতে বাধ্য থাকবে।
রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী ১২৪টি দেশের মধ্যে নেই রাশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এতে সই করেনি ইসরায়েলও। অবশ্য আইসিসি বলেছে, ফিলিস্তিন এ সংবিধিতে স্বাক্ষর করায় গাজা যুদ্ধে সংঘটিত ফৌজদারি অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার তার রয়েছে।
কী প্রভাব পড়বে ইসরায়েল ও হামাস নেতাদের ওপর?
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালনকারী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গ্রেফতারের ঝুঁকি এড়িয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র পশ্চিমা দেশগুলোতে সফর করতে পারবেন না।
ব্রিটেন জানিয়েছে, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ব্রিটেন তা কার্যকর করবে; যদি না নেতানিয়াহুর কূটনীতিক দায়মুক্তির বিষয়ে তারা সফলভাবে যুক্তি তুলে ধরতে পারে।
নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের জন্য সবচেয়ে বড় ব্যতিক্রম হবে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র। কেননা হোয়াইট হাউস মনে করে, ইসরায়েল–হামাস যুদ্ধে আইনি হস্তক্ষেপের এখতিয়ার আইসিসির নেই। এটি এমন এক অবস্থান, যেখানে এই যুদ্ধ নিয়ে জো বাইডেনের ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ফাটল বিস্তৃত হতে পারে।
ইয়োভ গ্যালান্টও মুক্তভাবে বিদেশ সফর করতে পারবেন না।
আইসিসির পরোয়ানায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বিশেষ আরেক শ্রেণির নেতার কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এই শ্রেণিতে আছেন আইসিসির পরোয়ানায় থাকা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি।
ইউক্রেন থেকে শিশুদের অপহরণ করার অভিযোগে এক বছর আগে পুতিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। জবাবে করিম খান ও আইসিসির বিচারপতিদের বিরুদ্ধে নিজস্ব গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে রাশিয়া। আর ২০১১ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ নিষ্ঠুর হাতে দমন করায় অভিযুক্ত হন গাদ্দাফি। এ ঘটনায় গ্রেফতারি পরোয়ানার কয়েক দিন পরই লিবীয় এ নেতাকে আটক ও হত্যা করেন বিদ্রোহীরা।
অন্যদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে নিয়মিতভাবে আরব মিত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার ব্যাপারে দু’বার ভাবতে হবে। তাকে বেশির ভাগ সময় হয়তো কাটাতে হবে কাতারেই। ইসরায়েলের মতো রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি কাতারও।
এছাড়া হামাসের অন্য দুই নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ গাজাতেই কোথাও আত্মগোপনে আছেন বলে ধারণা করা হয়। সেক্ষেত্রে তাদের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না। সাত মাস ধরে তাদের হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তবে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তাতে সফল হতে পারেনি ইহুদিবাদী দেশটি। সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/একেএ