ইউক্রেনের খারকিভের উত্তরাঞ্চলে হামলা আরও তীব্র করেছে রাশিয়া। ভয়াবহ হামলা থেকে বাঁচতে পুলিশের সহায়তায় পালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত ১০ মে থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের সীমানায় নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে বলে ইউক্রেন সরকার জানিয়েছে। কয়েকটি গ্রামও তারা দখল করে নিয়েছে।
তারপর থেকে পুলিশ কর্মীদের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে দুই পুলিশ কর্মী খারকিভের উত্তরের জায়গাগুলো থেকে মানুষকে সরিয়ে আনার কাজে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ভ্লাদিস্লাভ ইয়েফারভ ও ইয়ারেমচুক।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ভ্লাদিস্লাভ ইয়েফারভ গাড়িতে অসংখ্য গুলি লাগার চিহ্ন আছে। কিছুদিন আগের ঘটনা। ইয়েফারভ ও তার সহকর্মী ইয়ারেমচুকের গাড়ির ওপর রাশিয়ার স্নাইপাররা গুলি চালাতে থাকে। দু’জনেই ইউক্রেনের পুলিশ কর্মী। তারা ভভশাঙ্ক শহরে একজন বয়স্ক নারীকে আনতে যাচ্ছিলেন।
ইয়েফারভ বলছিলেন, আমেরিকায় তৈরি একটি সাঁজোয়া গাড়ি এসে তাদের বাঁচায়। তবে ওই নারীকে আর নিয়ে আসতে পারেননি তারা।
ইয়েফারভ বলছিলেন, “এখন লড়াই চলছে বলে ওই জায়গাগুলোতে বসবাস করা বিপজ্জনক। রাশিয়া সমানে আবাসিক এলাকায় গোলা ফেলছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চলছে। ইউক্রেনে নতুন অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া।”
আমরা ইয়ারেচুকের গাড়ির পেছন পেছন যেতে শুরু করলাম। তিনি আমাদের জানিয়ে দিলেন, “শহরে পৌঁছাবার আগে গাড়ি যতটা জোরে সম্ভব চালাতে হবে। কারণ, রাশিয়ার সেনা ওখানে গাইডেড অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করছে।’
ভালোদিমির ভভশাঙ্কের দক্ষিণ দিকে থাকেন। আমরা অলি-গলি দিয়ে তার বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলাম। রাস্তার ধারে একাধিক বাড়ি বোমায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। ভালোদিমিরের বাড়িতে পৌঁছাবার পর হঠাৎ, পুলিশ আমাদের শুয়ে পড়তে বলল। কারণ, বোমা বিস্ফোরণের শব্দ এসেছে।
ভালোদিমিরের কোনও তাড়া ছিল না। তিনি শর্টস ও টি শার্ট পরে ওয়াড্রোব থেকে জামাকাপড় বার করতে থাকলেন। পুলিশ তাকে বললো, ‘দ্রুত করুন’। তিনি বললেন, ‘এক মিনিটে তৈরি হয়ে আসছি।’
বাড়ির সব বন্ধ জানালা ঝনঝন করে উঠল। কারণ, পাশের একটি বাড়িতে গোলা এসে পড়েছে।
ইয়েফারভ ব্যাগ নিয়ে গাড়িতে রাখলেন। বাড়ির চত্বরে একটা কুকুর ছিল। ইয়েফারভ চেইন জোগাড় করে কুকুরের গলায় লাগিয়ে বললেন, “তুমিও আমাদের সঙ্গে চল।” ভালোদিমির চারপাশটা দেখে নিচ্ছিলেন। দ্রুত আমরা খারকিভ শহরের দিকে যেতে শুরু করলাম।
আমরা যখন অর্ধেক রাস্তায় পৌঁছেছি, তখন ভালোদিমিরের মেয়ে মারিয়ানার সঙ্গে দেখা হল। সে নিজেও পুলিশ সদস্য। বাবাকে আলিঙ্গন করে বললেন, “এত দেরি করলে কেন?” একগাদা ব্যাগ দেখে মাথা নাড়তে লাগলেন।
ভালোদিমির বলছিলেন, “আমার খুব খারাপ লাগছে। আমার ৬৬ বছর বয়স। আমি আর কোনওদিন আমার জায়গায় ফিরতে পারব না।”
মেয়ে বললেন, “বাড়ি ছেড়ে যাওয়া খুবই কষ্টের।”
এই শহর রাশিয়ার সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর প্রথম দিনেই এই শহর দখল করে নেয়। সূত্র: ডয়েচে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/একেএ