জার্মানিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে দুই দেশ আবারও ইউরোপের চালিকা শক্তি হিসেবে যৌথ উদ্যোগের অঙ্গীকার করেছে। প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, অর্থনীতির ক্ষেত্রে নিবিড় সহযোগিতা চান ওলাফ শলৎস ও এমানুয়েল মাক্রোঁ।
ইউরোপের কঠিন সময়ে জার্মানি ও ফ্রান্স দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরো উন্নতির লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জার্মানিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে দুই দেশ ইউরোপীয় স্তরে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা ও অর্থনীতি আরো মজবুত করার পরিকল্পনা পেশ করেছে। বার্লিনের কাছে দুই দেশের মন্ত্রিসভার যৌথ বৈঠকে সেই রূপরেখা রচনা করা হয়।
ফরাসি-জার্মান প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা পরিষদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে প্রকৃত অর্থে ভূ-রাজনৈতিক শক্তি ও নিরাপত্তার গ্যারেন্টার হয়ে উঠতে হবে। আজকের নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ সামলাতে এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম-ভিত্তিক কাঠামো আরো শক্তিশালী করতে সেই পথেই এগোতে হবে। ইউরোপে প্রতিরক্ষা খাতে উৎবাদন আরো দ্রুত বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে সেই পরিষদ। এ ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডারের গুরুত্বেরও উল্লেখ করা হয়েছে। ফ্রান্স ও জার্মানি পরমাণু ও প্রথাগত অস্ত্রের পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্র, মহাকাশ ও সাইবার হামলা প্রতিরোধের ক্ষমতাও মজবুত করতে চায়।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইউক্রেনের প্রসঙ্গও অত্যন্ত গুরুত্ব পেয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেন, পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলির উদ্দেশ্যে ইউক্রেনের জন্য আরো আর্থিক সাহায্যের ডাক দিয়েছেন।
তিনি জানান, আপাতত রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গচ্ছিত সম্পদ থেকে মোটা অংকের সুদের অর্থ ইউক্রেনের জন্য ব্যয় করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ নেতাদের মতে, হামলার মুখে আত্মরক্ষার তাগিদে ইউক্রেনকে রাশিয়ার ভূখণ্ডেও পশ্চিমা অস্ত্র প্রয়োগের অধিকার দেওয়া উচিত।
মাক্রোঁ বলেন, উত্তেজনা না বাড়ানোর নীতিতে অটল থেকেও মিসাইল হামলার উৎসে আঘাত হানার সুযোগ থাকা উচিত।
শলৎস বলেন, অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলির সব শর্ত মেনে ইউক্রেনের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলিকে সে বিষয়ে সতর্ক করে দেন। তার মতে, ‘আগুন নিয়ে খেলা’ করলে তার পরিণতি মারাত্মক হতে পারে।
সংকট সত্ত্বেও শলৎস ও মাক্রোঁ ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করতে সুদূরপ্রসারী সংস্কারের ডাক দিয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে আরো উদ্ভাবন, আরো বিনিয়োগ, লাল ফিতের ফাঁস আরো কমানো ও প্রতিযোগিতার বাজারে আরো ন্যায্য পরিবেশ নিশ্চিত করার ডাক দেন দুই শীর্ষ নেতা। তবে বর্তমান সংকটপূর্ণ পরিবেশ সত্ত্বেও ইউরোপে আরো আশাবাদের আহ্বান জানান মাক্রোঁ।
ম্যুনস্টার শহরে এক শান্তি পুরস্কার গ্রহণের পর তিনি বলেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ইউরোপই সঠিক জবাব। তবে তিনি স্বীকার করেন, বর্তমানে ইউরোপ অত্যন্ত বিভাজিত, অতি ধীর এবং অতি ভীতু। সেই দুর্বলতা কাটিয়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত