গাজায় হামাসের সামরিক শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে তেহরানে ইসমাইল হানিয়া গুপ্তহত্যার শিকার হলে এই ঘোষণা আসে।
ইসমাইল হানিয়ার মৃত্যুর পর ইরান প্রতিশোধের অঙ্গীকার করেছে। গত ৩১ জুলাই হানিয়ার ওপর হামলার পরও ইসরায়েল কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ইয়াহিয়া সিনওয়ার এখন অজ্ঞাত স্থান থেকে তার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সিনওয়ারকে হামাসের নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের বার্তা দিয়েছে হামাস। তবে তার বর্তমান অবস্থান থেকে তিনি কতটা কার্যকরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা এখনো অস্পষ্ট।
১৯৬২ সালে গাজার খান ইউনিস শহরে জন্মগ্রহণ করা সিনওয়ারকে হামাসের সবচেয়ে অনমনীয় নেতাদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আশির দশকের শুরুর দিকে গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য তাকে বারবার গ্রেফতার করা হয়। ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন এবং পরের বছরই ইসরায়েলি বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে চার দফা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
দীর্ঘ ২৩ বছর কারাগারে কাটিয়ে ২০১১ সালে এক বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে মুক্তি পান সিনওয়ার। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি হামাসের শীর্ষ পদে ফিরে আসেন এবং ২০১২ সালে সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে তিনি হামাসের গাজা শাখার প্রধান হন এবং ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হন।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের হামলার কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে সিনওয়ার বলেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিরা তাদের কাছে থাকা অবলম্বন দিয়েই লড়াই করছেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে।
সিনওয়ার আরও বলেছিলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে ও জনসমর্থনভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমরা আশা করেছি, গোটা বিশ্ব, মুক্ত মানুষেরা ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) অপরাধ ও নৃশংসতা বন্ধ করবে। দুঃখজনকভাবে, বিশ্ব নীরব দাঁড়িয়ে দেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব কি আমাদের কাছে এটাই আশা করে যে, যখন আমরা মারা পড়ছি, তখন আমরা সদাচরণ করা ভুক্তভোগী হয়ে থাকব? ইসরায়েল আমাদের ধরে ধরে মারবে আর আমরা টুঁ শব্দটি করব না?’
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল