কলকাতার আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের বিচার দাবি এবং হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় এবার হরতালের ডাক দিয়েছে 'সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়া' (এসইউসিআই)। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে এই বামপন্থী সংগঠনটি। যদিও রাজ্য সরকারের থেকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোন হরতালকেই মানা হবে না। হরতালকে ব্যর্থ করতে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মীকে তাদের কর্মস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'বাংলায় কোন হরতাল হয় না। যে হরতালে অংশ নেবে তারা তাদেরটা বুঝে নেবে আমি সকলকে আরজি জানাব সবকিছু খোলা রাখতে।'
এসইউসিআই'এর ডাকা হরতালকে সমর্থন না জানালেও আলাদা করে পুরো রাজ্যজুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করবে সিপিআইএম। সেই কর্মসূচিতে তৃণমূল, বিজেপিসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এই বাম দলটি।
বিজেপির পক্ষ থেকে শুক্রবার কলকাতার হাজরা মোড় থেকে কালীঘাটের দিকে একটি পদযাত্রা করবে বিজেপি। সেই সাথে দুপুর ২টা থেকে প্রত্যেকটি জেলায় সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মীদের ২ ঘন্টা সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আরজিকরের চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানাতে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা পেন ডাউন কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।
ন্যায় বিচার চেয়ে, অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফেও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিকাল ৪টায় কলকাতার মৌলালি থেকে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করেছে তৃণমূল। ওই মিছিলে মেলাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
গত ৯ আগস্ট ওই মেডিকেল কলেজের পোস্ট গ্রাজুয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই খুনের ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে গোটা রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, আন্দোলন চলে আসছে।
এরই মধ্যে নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বুধবার মধ্যরাতে আরজিকার মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের রাত দখল কর্মসূচির পালন করছিল আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। হঠাৎ করেই একদল মানুষ হাসপাতালে ঢুকে যথেচ্ছ ভাবে ভাঙচুর চালায়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগসহ আন্দোলনকারীদের মঞ্চ ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি মোটরসাইকেল। হামলার শিকার হতে হয় পুলিশ সদস্যদের। পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরাও আহত হন। প্রত্যেকটি মহলতাকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তাতে ছাত্রছাত্রীদের কোন দোষ দিচ্ছি না। কিছু বহিরাগত লোক যারা বাংলায় অশান্তি তৈরি করতে চান- সেই রাম (বিজেপি) এবং বাম (সিপিআইএম) মিলে এই গন্ডগোলটা পাকিয়েছে।'
এ ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন, 'আমরা আগামী রবিবারের মধ্যে এ ঘটনার তদন্তর শেষ করব বলে ঠিক করেছিলাম কিন্তু তদন্তের ভার সিবিআই এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আদালত যখন সিবিআইকে দায়িত্ব দিয়েছে আমরা সব রকম সহায়তা করব।'
বিডি প্রতিদিন/এএম