ডিমা নামের একজন ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্মুখসারিতে লড়েছেন। তিনি সবসময় ফিল্টার পর্যন্ত সিগারেট শেষ করেন। সাম্প্রতিক পোকরোভস্ক শহরের কাছে যুদ্ধের পর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ডিমার নেতৃত্বে থাকা ৮০০ জন সেনার মধ্যে অধিকাংশই নিহত বা মারাত্মক আহত হয়েছে। এতে যুদ্ধের ভয়াবহতা সহ্য করতে না পেরে তিনি অব্যাহতি নেন।
ডিমা কিয়েভের একটি সামরিক কার্যালয়ে নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন। সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার ব্যাটালিয়নের সৈন্যদের মৃত্যুর দৃশ্য তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর অনেক ইউনিট ভেঙে পড়েছে। নতুন সৈন্যদের মনোবলও ক্রমশ কমে যাচ্ছে, বিশেষত পূর্বাঞ্চলের ফ্রন্ট লাইনের পদাতিক বাহিনীতে।
সিএনএন-এ কথা বলা ছয়জন সেনা কর্মকর্তার মধ্যে চারজন তাদের পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেন। কারণ, তারা সেনাবাহিনীর অনুমতি ছাড়াই মিডিয়ায় কথা বলছিলেন। তারা জানান, পোকরোভস্কে নতুন সৈন্যদের মধ্যে অবাধ্যতা ও দলত্যাগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পর দলত্যাগের পথ খুঁজছে।
যুদ্ধের শুরুর দিকে যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছিল, তারা এখন নতুন পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। বর্তমানে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই এবং সরকারের ডিমোবিলাইজেশন আইন না আসা পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালনে বাধ্য।
গত বসন্তে মার্কিন সামরিক সহায়তা আসতে দেরি হওয়ায় ইউক্রেনের সৈন্যদের গোলাবারুদের সংকট দেখা দেয় এবং তাদের মনোবল ভেঙে যায়। কমান্ডাররা অভিযোগ করছেন, সৈন্যরা প্রায়শই ভালো অবস্থানে থাকলেও শত্রুর মোকাবিলা করার মতো পর্যাপ্ত অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। এর ফলে সেনারা অপরাধবোধে ভুগছেন এবং তাদের মনোবল ক্রমশ কমছে।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেকসান্দর সিরস্কি স্বীকার করেন যে, সৈন্যদের মনোবল এখনো একটি বড় সমস্যা হয়ে আছে। যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক সেনা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বা অনুমতি ছাড়াই অনুপস্থিত থাকছে। তবে এখন এ বিষয়টি এত সাধারণ হয়ে উঠেছে যে, সরকার এটি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে না।
পোকরোভস্ক অঞ্চলে সেনাবাহিনী রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির মুখে পড়েছে। ইউক্রেনের সিগন্যাল জ্যামার এবং সমন্বয়ের সমস্যার কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেক কমান্ডার বলছেন, যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী রুশদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে এবং প্রায় প্রতি ১০ জন রুশ সেনার বিপরীতে একজন ইউক্রেনীয় সেনা লড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে, অনেক সেনা কর্মকর্তা বলছেন, তারা সেনাদের স্বেচ্ছায় যুদ্ধক্ষেত্রে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করছেন। যুদ্ধের অবনতিশীল পরিস্থিতি এবং সেনাদের মনোবলহীনতা ইউক্রেনীয় বাহিনীর জন্য গুরুতর চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল