ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি স্থানীয় সময় রোববার যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছান। রাশিয়ার সঙ্গে আড়াই বছর ধরে চলমান যুদ্ধে কিয়েভের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন তিনি। জেলেনস্কি এই পরিকল্পনার নাম দিয়েছেন "বিজয় পরিকল্পনা," যা মূলত যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৌশল নির্ধারণ করবে।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ২০২৪ সালের নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কিয়েভের পরিকল্পনা তুলে ধরবেন। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে ইউক্রেনের কৌশল সম্পর্কে জানাতে চান।
এই বছরের পুরো গ্রীষ্মজুড়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র হয়েছে। মস্কো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দ্রুত অগ্রসর হলেও, কিয়েভ পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ঘেরাও করে রেখেছে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন সরকার কয়েক সপ্তাহ ধরে পশ্চিমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে আসছে, যেন তারা রাশিয়ার ভেতরে দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে হামলার অনুমতি দেয়। তবে এ চেষ্টায় খুব একটা সফলতা আসেনি। ফলস্বরূপ, জেলেনস্কি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সফর করছেন, যার মাধ্যমে কৌশলগত পরিবর্তন আনা হবে।
আগামী বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জেলেনস্কি আশা করছেন, তিনি বাইডেনকে তার পরিকল্পনার পক্ষে নিতে সক্ষম হবেন। বাইডেনের কাছেই প্রথমবারের মতো এই বিস্তারিত কৌশল উপস্থাপন করা হবে বলে জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেই পেনসিলভানিয়ায় একটি কামান ও গোলা উৎপাদনকারী কারখানা পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি সামাজিক মাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে কারখানার সকল কর্মীকে কৃতজ্ঞতা জানান। এর পর তিনি নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন সফর করবেন, যেখানে তিনি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন।
জেলেনস্কি আশা করছেন, রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় ৩০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ কীভাবে শেষ করা যায়, তা নিয়ে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। যদিও এই পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, তবে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, প্রথমে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং পরে অন্যান্য মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গেও তিনি এই পরিকল্পনা শেয়ার করবেন।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জেলেনস্কি কমলা হ্যারিসের সঙ্গেও আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া আগামী বৃহস্পতি বা শুক্রবার তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কিয়েভ তার পরিকল্পনা নিয়ে পুরো শরৎকাল ধরে আলোচনা করবে এবং আগামী নভেম্বর মাসের শুরুতে এর বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তুত হবে বলে জানা গেছে। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যেখানে রাশিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে মস্কো আগেই জানিয়ে দিয়েছে, তারা কোনো সম্মেলনে যোগ দেবে না, যদি না ইউক্রেন তাদের চারটি অঞ্চল ছেড়ে দেয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "আমি মনে করি, দুই পক্ষই এখনো সামরিক জয়ের সম্ভাবনা দেখছে," যা যুদ্ধের সমাপ্তি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করছে।
বিশ্বজুড়ে এই আলোচনা ও পরিকল্পনা ইউক্রেনের বিজয়ের পথে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল