৩৬০ বছরের পুরনো নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে দায়িত্ব পালনকালে এই প্রথম একজন সিটি মেয়র ঘুষ-দুনীতিসহ নানা অপকর্মে অভিযুক্ত হলেন। বুধবার সন্ধ্যায় মেয়র এরিক এডামসকে গুরুতর অপরাধে লিপ্ত থাকার মামলায় অভিযুক্ত করা হলো। চাঁদার নামে নেওয়া অর্থের বিনিময়ে তুরস্ক, ইসরায়েল, চীন, কাতার, সাউথ কোরিয়া, উজবেকিস্তানকে বেআইনীভাবে নানা সুবিধা প্রদানের চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে এফবিআইয়ের তদন্তে।
নিউইয়র্ক টাইমস সর্বপ্রথম সংবাদটি প্রকাশের পরই আমেরিকার সর্বত্র আলোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছে। কারণ, যে সময় ম্যানহাটান ফেডারেল কোর্টে মেয়র এডামসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সাবমিট করা হয় তার কিছুক্ষণ আগে জাতিসংঘে আগত বিশ্বনেতাদের সম্মানে প্রদত্ত ডিনারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সাথে খোশ-গল্পে মেতেছিলেন এডামস। সেটি অনুষ্ঠিত হয় ম্যানহাটানের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে। সেখানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসও ছিলেন।
চার বছর মেয়াদি সিটি মেয়র পদে ২০২১ সালে ১১০তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন এডামস। তিনি হচ্ছেন এই সিটির দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র।
জানা যায়, ইসরায়েল, চীন, কাতার, সাউথ কোরিয়া এবং উজবেকিস্তানের কাছে থেকে বিপুল অর্থ চাঁদা হিসেবে নিয়ে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন মেয়র এডামস-এমন অভিযোগে গত বছর নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া তদন্তে এ যাবত মেয়র এডামসের উর্দ্ধতন ১৯ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে ডেপুটি মেয়র, পুলিশ কমিশনার, স্কুল সমূহের চ্যান্সেলর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। অন্যরা বরখাস্ত হয়েছেন অথবা দায়িত্ব পাল্টেছেন মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। গত বছর নভেম্বরে একটি অনুষ্ঠানে যোগদানের প্রাক্কালে এফবিআই মেয়র এডামসের গতিরোধ করে তার সেলফোনসহ ইলেক্টনিক্স সকল ডিভাইস আটক করে। সেই থেকেই মেয়রের ওপর নজরদারি চললেও সব সময় এরিক এডামস অস্বীকার করেছেন কোন ধরনের দুর্নীতি বা অপকর্মে লিপ্ত থাকার কথা। এমনকি, ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অভিযোগনামা আদালতে সাবমিটের পরও ভিডিওতে রেকর্ডকৃত এক বিবৃতিতে মেয়র উল্লেখ করেছেন যে, তিনি যদি সত্যিকার অর্থেই অভিযুক্ত হোন, তাহলে মামলাটির বিচার দ্রুত সম্পন্নের অনুরোধ জানাবেন। নগরবাসী যাতে প্রকৃত সত্য জানতে পারেন-এমন কথা বলে মেয়র সর্বসাধারণের প্রতি ধৈর্য ধারণ এবং তার জন্যে দোয়া কামনা করেছেন। ইতিমধ্যেই তাকে পদত্যাগের আহ্বান উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সেটিও নাকচ করে দিয়েছেন মেয়র এডামস।
ফেডারেল কোর্টে পেশকৃত অভিযোগ নামার তথ্য বৃহস্প্রতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানার পর মেয়র এডামসকে পদত্যাগের আহ্বান জানাবেন স্টেট গভর্ণর ক্যাথি হোকুল। সে আহ্বানে সাড়া না দিলে গভর্ণর তাঁর ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন এডামসকে অপসারণ করতে। সে ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হবেন সিটির পাবলিক এডভোকেট জুমানি উইলিয়ামস।
উল্লেখ্য, মেয়র এরিক এডামসকে ২০২১ সালের নির্বাচনে প্রবাসীরাও ব্যাপকভাবে সাপোর্ট দেন। হোমকেয়ার ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজনের পক্ষ থেকে মোটা অংকের চাঁদাও দেওয়া হয়েছে। তার বিনিময়ে ঐসব ব্যবসায়ীদের বাসা এবং অনুষ্ঠানে যোগদান করেন অকৃপণভাবে। যদিও প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণে, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুর্বৃত্তের ধাক্কা, গুলি ও পুলিশের গুলিতে নিহত তিন বাংলাদেশির স্বজনকে সমবেদনা জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি এরিড এডামস-এমন অভিযোগ রয়েছে। দুর্বৃত্তরা এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি বলেও জানান নিহতের স্বজনেরা।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ