গত ১৪ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো লেবার পার্টির সরকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বুধবার (৩০ অক্টোবর) চ্যান্সেলর র্যাচেল রিভস এই বাজেট ঘোষণা করবেন। সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বাজেটে ট্যাক্স বাড়ানোসহ ব্যয় কাট করা হবে। এতে সরকার প্রায় ৪০ বিলিয়ন পাউন্ড আয় কিংবা সাশ্রয় করতে পারবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এবারের বাজেটের খুঁটিনাটি তথ্য-
প্রতি বছরের অক্টোবর নাগাদ অটাম বাজেট ঘোষণা করেন চ্যান্সেলর। ৩০ অক্টোবর লন্ডন সময় দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ র্যাচেল রিভস এই বাজেট ঘোষণা করবেন। বিবিসি আই প্লেয়ার সহ আরও কিছু মিডিয়া বাজেট ঘোষণা লাইভ ব্রডকাস্ট করবে।
র্যাচেল রিভস জানিয়েছেন, বিভিন্ন সেক্টরে ইনভেস্ট করতে তিনি সরকার কতৃক লোন নেওয়া সহজ করতে যাচ্ছেন। হাউজিং, রোডসহ বিভিন্ন সেক্টরে ফাইন্যান্স করতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন পাউন্ড লোন নেওয়ার সুযোগ পাবে সরকার। নির্বাচনের ইশতেহারে লেবার পার্টি জানিয়েছিল তারা ট্যাক্স বাড়াবে না। তবে গত জুলাই থেকে সরকার বলে আসছে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে অর্থনীতিকে বাজে অবস্থায় পেয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এটিই ছিল দেশের সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক অবস্থা। তাই সবকিছু স্বাভাবিক করার আগে তাদেরকে কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তবে তারা কঠোর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না। বাজেটে যেসব ঘোষণা হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-১. ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স
চ্যান্সেলর নিয়োগকর্তাদের জন্য ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। বর্তমানে এমপ্লয়াররা তাদের স্টাফদের বেতনের ওপর ১৩.৮ শতাংশ রেটে ইন্সুরেন্স প্রদান করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স বাড়ালে দিন শেষে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২. ইনকাম ট্যাক্স
ইনকাম ট্যাক্স এবং ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আয় বিবেচনা করা হয়। ইনকাম ট্যাক্স এবং ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে আগের কনজার্ভেটিভ সরকার একটি থ্রেশহোল্ড ক্যাপ চালু করে। এই ক্যাপ আগামী ২০২৮ সাল পর্যন্ত চালু থাকবে। তবে এবারের বাজেটে চ্যান্সেলর এই ক্যাপ ২০২৮ সালের পর বাতিল করার ঘোষণা দিতে পারেন। মুদ্রাস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই ট্যাক্স এবং ইন্স্যুরেন্স বাড়বে। ফলে মানুষকে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
৩. ইনহ্যারিটেন্স ট্যাক্স
ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স বর্তমানে ৪০ শতাংশ। এই ট্যাক্স থ্রেশহোল্ড বর্তমানে ৩ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড। এই অর্থের বেশি সম্পদ রেখে মারা যাওয়া যেকোনো ব্যক্তির প্রপার্টি থেকে ইনহেরিটেন্স ট্যাক্স নেওয়া হয়। এই ট্যাক্স থ্রেশহোল্ড বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
৪. ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স
এই ট্যাক্সটি সেকেন্ড হোম বা বিনিয়োগের লাভের অংশ থেকে নেওয়া হয়। এই ট্যাক্স ব্যক্তি এবং কিছু ব্যবসা মালিক কর্তৃক দেওয়া হয়ে থাকে। হায়ার ইনকাম করা ব্যক্তিদের লাভের ২৪ শতাংশ ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স হিসেবে নেওয়া হয়। এছাড়া শেয়ারের মত অন্যান্য সম্পদ থেকে লাভের উপর ২০ শতাংশ নেওয়া হয়। এবার এই ট্যাক্সের হার বাড়ানো হতে পারে।
৫. পেনশন ট্যাক্সেশন
বিভিন্ন উপায়ে চ্যান্সেলর প্রাইভেট পেনশন সিস্টেমে কিছু পরিবর্তন এনে আরও ট্যাক্স আরোপ করতে পারেন। এর মধ্যে পেনশন পট থেকে ট্যাক্স ফ্রি একমাস ক্যাপ কমানো, নিয়োগকর্তাদের কর্মচারীদের পেনশনে অর্থ জমা করার জন্য ট্যাক্স বিরতি কমানো কিংবা পেনশন কনট্রিবিউশনের উপর ট্যাক্স রিলিফের সিস্টেম পরিবর্তন করা হতে পারে।
৬. স্ট্যাম্প ডিউটি
আপনি ইংল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে একটি নির্দিষ্ট মূল্যে প্রপার্টি কিনলে স্ট্যাম্প ডিউটি ল্যান্ড ট্যাক্স প্রদান করতে হয়। এবার এই স্ট্যাম্প ডিউটি বাড়ানো হতে পারে।
৭. নন-ডোম ট্যাক্স স্ট্যাটাস
ব্রিটিশ কোনো নাগরিকের যুক্তরাজ্যের বাইরে কোনো প্রপার্টি থাকলে সরকারকে কোনো ট্যাক্স দিতে হয়না। এটিকে নন ডেম ট্যাক্স স্ট্যাটাস বলা হয়। এবার এই স্ট্যাটাস কনসিডার করে ট্যাক্স আরোপের চিন্তা করা হচ্ছে।
৮. ফুয়েল ডিউটি
এক দশকের বেশি সময় ধরে ফুয়েল ডিউটি বাড়েনি। সর্বশেষ নতুন করে ২০২২ সাল থেকে এই ডিউটি প্রতি লিটার ফুয়েলে ৫ পাউন্ডে ক্যাপ করা হয়। এবার এই ফুয়েল ডিউটির ক্যাপ বাতিল করা হতে পারে।
এদিকে বাজেটে এসব ঘোষণা দেওয়ার আগেই কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উইন্টার ফুয়েল পেমেন্ট বাতিল, স্টেট পেনশনের পরিমাণ ৪ শতাংশ বৃদ্ধি, প্রাইভেট স্কুলের উপর ভ্যাট চালু এবং এনার্জি উইন্ডফল ট্যাক্স বৃদ্ধি।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ