২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লক্ষ ২১ হাজার মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে যেত। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা পৌঁছায় ৩ লক্ষ ২৭ হাজারে। সে বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যত মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে গেছেন, তার প্রায় ৬৭ শতাংশ মানুষই গিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে। স্বাভাবিক নিয়মেই এই লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি মানুষের সিংহভাগই ভারতে এসে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের সবথেকে কাছে থাকা কলকাতাকেই বেছে নিয়েছেন।
ভারতের অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘চিকিৎসা পর্যটক’দের সংখ্যা কমলে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। কারণ, কলকাতার বিভিন্ন বড় হাসপাতাল থেকে হোটেল, রেস্তোরাঁ ব্যবসা চিকিৎসার কারণে আসা বাংলাদেশিদের উপরে নির্ভরশীল। সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে বাংলাদেশিরা কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালেই চিকিৎসা করান। ভাষা, সংস্কৃতির মিল থাকার ফলেও তারা মুম্বাই বা দক্ষিণ ভারতের বদলে পশ্চিমবঙ্গকে প্রাধান্য দেন।
দিল্লির আর্থিক গবেষণা সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ অন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক রিলেশনস’ বা আইসিআরআইইআর সম্প্রতি এ নিয়ে একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এ ভারতের চিকিৎসা পর্যটনে বাংলাদেশের উপর নির্ভরতা নিয়ে সেই গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের চিকিৎসা পর্যটন শিল্পে সবথেকে বড় অংশীদার হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের অগস্টে শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পরে ভারতের চিকিৎসা পর্যটন ক্ষেত্র ধাক্কা খেয়েছে। আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশিদের যাতায়াত কমেছে। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। ফলে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা পর্যটক কমেছে। শুধু হাসপাতাল, তার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ক্ষেত্রে যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে। সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূ্র্বাঞ্চলে। কারণ, এই সব অঞ্চলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা পর্যটক যান।
পরিসংখ্যান বলছে, যে দশটি দেশ থেকে সবথেকে বেশি মানুষ ভারতে চিকিৎসা করাতে যান, তার মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। এ ছাড়া ওই তালিকায় রয়েছে ইরাক, ইয়েমেন, ওমান, মলদ্বীপ, সুদান, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, মিয়ানমার। ২০১৭ সালে বিদেশ থেকে প্রায় ৪ লক্ষ ৯৪ হাজার মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন। তার মধ্যে ৪৪.৮ শতাংশই বাংলাদেশি। ২০২২-এ যান প্রায় ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার। তার ৬৮.৯ শতাংশ বাংলাদেশের। এর বাইরে বহু মানুষ সীমান্ত পেরিয়ে সীমান্তবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়ে যান।
কলকাতার বণিকসভার এক শীর্ষ ব্যক্তি বলেছেন, ‘‘অনেকে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করছেন। কিন্তু এতে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ধাক্কা খাবে। হাসপাতালের ব্যবসা মার খাবে। তার ফলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে। নিউ মার্কেট থেকে ই এম বাইপাসে তৈরি বহু হোটেল বাংলাদেশি রোগীদের উপরে নির্ভরশীল। সেখানে কলকাতা ও রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কাজ করেন। বাংলাদেশি রোগী না এলে এই হোটেলের ব্যবসা মার খাবে। অনেকেই রুটিরুজি হারাবেন।’’
সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল