যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসরত প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি মানুষ দুর্ভিক্ষের ‘গুরুতর ঝুঁকিতে’ রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি)।
ইসরায়েলের অব্যাহত অবরোধের মুখে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা ঢুকতে না পারার কারণে সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম খাদ্য সংকটের’ মুখোমুখি হচ্ছেন বলেও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন বা আইপিসি মূলত জাতিসংঘ, দাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা, যাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহল একটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে কি-না, সেটির প্রাথমিক মূল্যায়ন করে থাকে।
সোমবার (১২ মে) প্রকাশিত আইপিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে পর থেকেই গাজার খাদ্য পরিস্থিতিতে ‘বড় ধরনের অবনতি’ ঘটেছে।
বর্তমানে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু না হলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল এবং হামাসের দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ‘সাময়িক স্বস্তি’ ফিরেছে। কিন্তু দুই প্রতিপক্ষের মধ্যে নতুন করে যে বৈরিতা দেখা যাচ্ছে, সেটি গাজাবাসীকে পুনরায় উদ্বিগ্ন করে তুলছে।
বিশেষ করে, গত মার্চের শুরু থেকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের অব্যাহত বাধা পরিস্থিতিতে আরও জটিল করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে, বর্তমানে গাজার প্রায় দুই লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ‘তীব্র’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখিন হচ্ছেন। এ অবস্থায় দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আইপিসি।
গত মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে গাজায় আবারও অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এরপর গত দুই মাস ধরে সেখানে খাদ্য, ওষুধ সহ জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
ইসরায়েল বলছে, ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে এখনো যেসব নাগরিক জিম্মি রয়েছে, তাদেরকে মুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যেই তারা এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
যদিও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল ইসরায়েলের এই অব্যাহত অবরোধের বিরোধিতা করে নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ বলেছে, গাজা সীমান্ত তারা ইতোমধ্যেই মানবিক সহায়তা সামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে। ইসরায়েল বাধা না দিলেই সেগুলো দ্রুত ঢুকে যেতে পারবে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানাচ্ছে ত্রাণ সহায়তার ওপর ইসরায়েলের অব্যাহত এই অবরোধ এবং গাজাবাসীকে ‘অনাহারে রাখার নীতি’ যুদ্ধাপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।
আইপিসি প্রকাশিত সবশেষ মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, গাজার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন, অর্থাৎ প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ অনাহারের মুখোমুখি হচ্ছে।
২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১১ মাসে সেখানকার পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭১ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, খাদ্যাভাবের কারণে গাজার অনেক পরিবার বিভিন্ন ধরনের ‘চরম পদক্ষেপও’ নিচ্ছে। কেউ কেউ ভিক্ষা করা শুরু করেছে, অনেকে ময়লা-আবর্জনা কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।
‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) জানায়, অক্টোবরের তুলনায় পরিস্থিতির এই অবনতি বিশ্বব্যাপী সংঘাতে ঘেরা অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রতিফলন।
এর বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে ১.৯৫ মিলিয়ন (১৯ লাখ ৫০ হাজার) মানুষ, অথবা গাজার জনসংখ্যার ৯৩ শতাংশ, তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ স্তরের মধ্য দিয়ে বাস করছে, যার মধ্যে দুই লাখ ৪৪ হাজার জন ‘বিপর্যয়কর’ স্তরের সম্মুখীন হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত