ব্রিটিশ রাজপরিবারে কি বরফ গলছে? প্রিন্স হ্যারির যুক্তরাজ্য সফরকে কেন্দ্র করে এই মুহূর্তে ব্রিটেনের রাজনৈতিক মহলে এই জল্পনাই তুঙ্গে। সোমবার লন্ডনে এসে হ্যারি তাঁর প্রয়াত দাদি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ১৯ মাস পর দেশে ফেরা হ্যারি কি তাঁর বাবা, রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে দেখা করবেন?
হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল ২০২০ সালে রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে যাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরে। অপরাহ উইনফ্রে-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে, নেটফ্লিক্স সিরিজ এবং হ্যারির স্মৃতিকথা 'স্পেয়ার'-এ রাজপরিবারের বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ সেই দূরত্ব আরও বাড়িয়ে তোলে।
শেষবার হ্যারি তাঁর বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন রাজা চার্লসের ক্যানসার ধরা পড়ার খবর পেয়ে তিনি দ্রুত লন্ডন এসেছিলেন। সেই সময়ে দু'জনের মধ্যে মাত্র ৪৫ মিনিট কথা হয়েছিল।
যদিও সম্পর্কের এই শীতলতা কাটিয়ে সম্প্রতি পরিবর্তনের কিছু আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষত, হ্যারির আইনি লড়াই শেষ হওয়ার পর তিনি নিজে থেকেই সমঝোতার আগ্রহ প্রকাশ করেন। গত এপ্রিলে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আর লড়াই করার কোনো মানে হয় না। জীবন মূল্যবান। আমার বাবা আর কতদিন আছেন, তা আমি জানি না।
হ্যারির যুক্তরাজ্য সফর এমন এক সময়ে হলো, যখন তিন বছর আগে প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো মনে করছে, হ্যারির এই সফর বাবা ও ছেলের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত পুনর্মিলনের একটি সুযোগ তৈরি করতে পারে।
জুলাই মাসে হ্যারি ও মেগানের জনসংযোগ দলের প্রধান এবং রাজা চার্লসের প্রেস প্রতিনিধির মধ্যে একটি গোপন বৈঠকের খবরও সামনে আসে। এর থেকে বোঝা যায় যে, দুই পক্ষই শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করছে।
স্মৃতিকথা 'স্পেয়ার' প্রকাশ করার পর রাজপরিবারের সঙ্গে হ্যারির সম্পর্কের টানাপোড়েন নতুন মাত্রা পায় । বইটি রাজপরিবারের ভেতরের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দেয় এবং রাজপরিবারের ঐক্যের ধারণা ভেঙে দেয়। হ্যারি তাঁর বাবার একটি ব্যক্তিগত কথোপকথনের কথা উল্লেখ করে লেখেন, চার্লস নাকি একবার তাঁর দুই ছেলেকে বলেছিলেন, দয়া করে, ছেলেরা, আমার শেষ বছরগুলোকে দুর্দশাময় করে তুলো না।
তবুও, ৭৬ বছর বয়সী রাজা চার্লস হয়তো তাঁর সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, তিনি হয়তো তাঁর নাতি-নাতনি আর্চি (৬) এবং লিলিবেট (৪)-এর সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে চান।
বর্তমানে লন্ডনে হ্যারি তাঁর প্রিয় দাতব্য সংস্থা 'ওয়েলচাইল্ড অ্যাওয়ার্ডস' অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। অসুস্থ শিশুদের সাহসিকতাকে সম্মান জানাতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এক সময় হ্যারি রাজপরিবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন এবং তিনি ব্রিটেনের তরুণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য কাজ করতেন। এই অনুষ্ঠানটি যেন সেই সোনালি অতীতেরই এক স্মৃতিচারণ।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল